স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর বাঘায় বনভোজনের চাঁদা দিতে না পারায় অষ্টম শ্রেণির ৪২ শিক্ষার্থীকে পিটিয়েছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। খবর পেয়ে অভিভাবকেরা বিদ্যালয় ঘেরাও করে প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলা চালিয়ে তার দুটি দাঁত ভেঙে দিয়েছেন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পর পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে গেছে।
গতকাল শনিবার রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চণ্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নাম নজরুল ইসলাম। আর অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষকের নাম মোহাম্মদ আলী। অভিভাবকদের দাবির মুখে তিনি চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির কাছে আবেদন করেছেন। অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, তাদের ক্লাসে ১০৬ জন শিক্ষার্থী আছে। বনভোজনের জন্য তাদের চাঁদা ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তাদের অনেকেই এ পরিমাণ টাকা চাঁদা দিয়ে বনভোজনে যেতে চায়নি। আগামীকাল (আজ) রোববার বনভোজনের নির্ধারিত দিন।
অষ্টম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভাষ্য, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শিক্ষক মোহাম্মদ আলী অষ্টম শ্রেণির ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বনভোজনের চাঁদা দিতে বললে কেউ কেউ দেয়, আবার কেউ কেউ পরে দিতে চায়। তবে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী এতো টাকা দিয়ে বনভোজনে যেতে অপারগতা জানায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শিক্ষক ৪২ শিক্ষার্থীকে বেত দিয়ে পেটান। এতে রুমা ইয়াসমিন নামের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খবর পেয়ে হাফিজুর রহমান নামের একজন অভিভাবক ছুটে এলে শিক্ষক মোহাম্মদ আলী তাকে ধমক দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। ফিরে গিয়ে ওই অভিভাবক অন্য অভিভাবকদের ডেকে নিয়ে বিদ্যালয়ে যান। তাদের সাথে স্থানীয় চণ্ডিপুর বাজারের লোকজনও যান। তারা বিদ্যালয় ঘেরাও করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক উত্তেজিত অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করতে এলে অভিভাবকেরা তাকে পিটুনি দেন। এতে তার ওপরের মাড়ির দুটি দাঁত ভেঙে যায়।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র হালদার ও বাঘা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ আহত অবস্থায় বেলা ১১টার দিকে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। আর ওই বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক মোহাম্মদ আলী, স্বপন শাহ ও মোশাররফ হোসেনকে উত্তেজিত অভিভাবকেরা দুপুর ১২টা পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখেন। তাদের দাবির মুখে মোহাম্মদ আলী অব্যাহতি চেয়ে আবেদনপত্র দেন। এরপর পুলিশ এ তিন শিক্ষককে উদ্ধার করে। অপর দু শিক্ষককে ছেড়ে দিলেও পুলিশ মোহাম্মদ আলীকে থানায় নিয়ে যায়।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান জানান, অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তার নামে মামলা করা হবে। বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক আলমগীর রেজা বলেন, প্রধান শিক্ষকের ওপরের মাড়ির দুটি দাঁত ভেঙে গেছে। এছাড়া গণপিটুনিতে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কালচে দাগ হয়ে গেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি সহকারী শিক্ষকদের ডেকে বলেছিলেন, শিক্ষার্থীরা চাঁদা না দিলে বনভোজন পিছিয়ে দেয়া হবে। শিক্ষার্থীদের পেটানোর ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। তার দাবি, প্রধান শিক্ষক হিসেবে অভিভাবকদের শান্ত করার জন্য কথা বলতে গিয়ে তিনি হামলার শিকার হয়েছেন।
অভিযুক্ত শিক্ষক শিক্ষার্থীদের পেটানোর কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, পরের দিন বনভোজন অথচ টাকা ওঠেনি। এ জন্য তার খুব খারাপ লাগছিলো। তাই তিনি ওদের দুই-একটি বাড়ি দিয়েছেন। মহিউদ্দিন নামের এক অভিভাবকের অভিযোগ, শুধু বনভোজনের টাকার জন্য নয়; এর আগেও এ শিক্ষক বিদ্যালয়ের ইউনিফরমের টাকার জন্য শিক্ষার্থীদের পিটিয়েছেন। চম্পা বেগম নামের এক অভিভাবক এ শিক্ষকের বিচার দাবি করেন।