১০ বছর পর ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আজ

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সংগঠনের গঠনতন্ত্রে প্রতি তিন বছর পর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও ১০ বছর পর এ সম্মেলন হচ্ছে। অথচ উপজেলাগুলোর কমিটি গঠিত হয়নি, পৌর কমিটিগুলোর অবস্থাও একই। সম্মেলন উপলক্ষে অর্ধকোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা।

জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, বুধবার সকালে শহরের ওয়াজির আলী স্কুলমাঠে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। অতিথি হিসেবে থাকবেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, দলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকসহ কয়েকজন।

২০০৫ সালের ২৫ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সরাসরি ভোটে আবদুল হাই সভাপিত ও অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৬ বছর পর ২০১১ সালে ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর আর সম্মেলন হয়নি।

এবারের সম্মেলনে সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি আবদুল হাই, বর্তমান সহসভাপতি আবদুল ওয়াহেদ জোয়ারদার এবং অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক আবেদ আলীর নাম শোনা যাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, অ্যাডভোকেট আবদুর রশীদ এবং যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক কাজী এনামুল হক প্রার্থী হয়েছেন। এদিকে গুরত্বপূর্ণ দুটি পদের যেকোনো একটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সফিকুল ইসলাম অপু।

অন্যদিকে জেলার ছয়টি উপজেলা কমিটিগুলোর মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলায় সম্মেলন হয়নি। ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার মেয়াদ পার হয়েছে ১২ বছর। আবার নয় বছর পর গত বছর কালীগঞ্জ উপজেলা কমিটির সম্মেলন করতে গিয়ে নিজ দলের কর্মীদের হাতে খুন হন কোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনন্দ মোহন। ১৯ বছর পর শৈলকুপা উপজেলার সম্মেলন হলেও কমিটি ঘোষণা করতে পারেননি নেতারা। একই অবস্থা জেলার পৌরসভা কমিটিগুলোর। শুধু কালীগঞ্জ পৌরসভা কমিটি গঠন সম্ভব হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আক্কাস আলী জানান, উপজেলা কমিটিগুলো করতে না পারলেও জেলা কমিটি গঠনে কেন্দ্রীয়ভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই তারা সম্মেলন করছেন। পরে এ নেতারা উপজেলা কমিটি করবেন। সম্মেলন উপলক্ষে ২৩৫ জন কাউন্সিলর (প্রতিনিধি) নির্বাচন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা কমিটির নেতা নির্বাচন করবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, তারা চান ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হোক। তাহলে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসবে। জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক কাজী এনামুল হক মিলন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীরা চান এবারের সম্মেলনে যেন সৎ, যোগ্য ও দলের জন্য নিবেদিত নেতাকর্মীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলকে আরো সুসংগঠিত করতে হবে। সম্মেলনের মধ্যদিয়ে যেমন কর্মী-সমর্থকরা চাঙ্গা হবেন, তেমনি নতুন নেতৃত্বের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত হবে।

এদিকে এ সম্মেলন ঘিরে ইতোমধ্যে জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক রঙিন ব্যানার, তোরণ, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। বিভিন্ন পদের প্রার্থীরা দলীয় সভানেত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবি দিয়ে ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করেছেন। সেই সাথে ভবনজুড়ে বিশাল আকৃতির ব্যানার টানানো হয়েছ। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিদিনই মহড়া দিচ্ছেন। শহরের মোড়ে মোড়ে তারা স্থাপন করেছেন প্রচার কেন্দ্র। দলের পক্ষ থেকে সম্মেলন সফল করার জন্য স্থানীয় ওয়াজির আলী হাই স্কুলমাঠে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জেলা কমিটির সম্মেলন ঘিরে ঝিনাইদহ-২ আসনের বর্তমান স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি দূর থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটিগুলোর ওপর তার পিতা সাবেক সংসদ সদস্য শিল্পপতি নূর-এ আলম সিদ্দিকীর বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে।

Leave a comment