মাথাভাঙ্গা মনিটর: রোববার রাতে কাম্প নউয়ের এই ম্যাচে আলোচনায় ছিল মেসি-রোনালদো দ্বৈরথও। সে প্রতিযোগিতায় উল্টো চিত্র; আর্জেন্টিনা অধিনায়ক গোল পাননি, পেয়েছেন রিয়ালের পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। তবে ম্যাচ শেষে বিজয়ীর বেশ টানা চারবারের বর্ষসেরার। বার্সেলোনার পক্ষে গোল দুটি করেন জেরেমি মাথিউ আর দারুণ ফর্মে থাকা লুইস সুয়ারেস। রিয়ালের একমাত্র গোলটি রোনালদোর। দ্বাদশ মিনিটে ম্যাচে প্রথম সুযোগ পায় রিয়াল। কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিল না; বাঁ-দিক থেকে করিম বেনজেমার দারুণ একটি ক্রসে রোনালদো পা লাগালেও বলটি ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। রিয়াল না পারলেও প্রথম সুযোগেই এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। ১৯তম মিনিটে লিওনেল মেসির দারুণ এক ফ্রি-কিকে হেড করে দলকে এগিয়ে দেন ফরাসি ডিফেন্ডার জেরেমি মাথিউ। ৩১তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর অত্যন্ত সহজ একটা সুযোগ নষ্ট করে নেইমার, ছোট ডি বক্সের মধ্যে গোলরক্ষককে একা পেয়েও লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ হন ব্রাজিলিয়ান তারকা। আর নেইমারের ওই চরম ভুলের পরেই পাল্টা আক্রমণ থেকে সমতাসূচক গোলটি করে রিয়াল। লুকা মদ্রিচের বাড়ানো বল না ধরে সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে ব্যাকহিল করেন বেনজেমা। আর তা থেকেই দ্রুত ছুটে এসে বল জালে পাঠান রোনালদো। লিগে রোনালদোর এটি ৩১তম গোল। ৩২ গোল নিয়ে শীর্ষে আছেন মেসি। ৪০তম মিনিটে বার্সেলোনা ডি বক্সে জটলার মধ্যে থেকে গ্যারেথ বেল একবার বল জালে পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু অফসাইডের কারণে সেটা গোল হয়নি। প্রথমার্ধের শেষ পাঁচ মিনিটে দলকে এগিয়ে দেয়ার আরেকটি সুযোগ পান ওয়েলসের এই ফরোয়ার্ড, কিন্তু একটুর জন্যে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটে পাল্টা আক্রমণ থেকে আরেকটি ভালো আক্রমণ করে রিয়াল। জোরালো কোনাকুনি শটও মারেন বেনজেমা, কিন্তু দারুণ দক্ষতায় ডান-দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেটা ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভো। ৫৬তম মিনিটে লুইস সুয়ারেসের চমৎকার নৈপুণ্যে আবারও এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। মাঝ মাঠের আগে থেকে দানি আলভেসের উঁচু করে মারা বল অনেকটা দৌড়ে দারুণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দ্রুত ডি বক্সে ঢুকে ডান পায়ের কোনাকুনি শটে ইকের কাসিয়াসকে পরাস্ত করেন সুয়ারেস। ম্যাচে দ্বিতীয়বারের মতো পিছিয়ে পড়ে যেন মেজাজ হারিয়ে ফেলে রিয়ালের খেলোয়াড়েরা। ফাউল করায় বার্সেলোনাও কম যায়নি; ফলাফল পরের ১০ মিনিটে রেফারিকে তিনবার হলুদ কার্ড দেখাতে হয়। এই পর্বে কার্ড দেখায় অবশ্য স্বাগতিকরাই এগিয়ে ছিল; কাতালুনিয়াদের হাভিয়ের মাসচেরানো ও আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা আর অতিথি মিডফিল্ডার ইসকো হলুদ কার্ড পান। শুরু থেকে নেইমার তেমনভাবে জ্বলে উঠতে না পারলেও ৬৭তম মিনিটে সম্পূর্ণ একার প্রচেষ্টায় দারুণ একটা আক্রমণ করেন তিনি। মাঝ মাঠের আগে থেকে বল পায়ে দুই পাশে প্রতিপক্ষের পাঁচ জন খেলোয়াড়ের বাধা এড়িয়ে ক্ষিপ্র গতিতে বিপজ্জনক সীমানায় ঢুকে পড়েন তিনি। কিন্তু শেষটা ভালো করতে পারলেন না, ক্রসবারের অনেক উপর দিয়ে বল উড়িয়ে মারলেন। ৭৩ ও ৭৪তম মিনিটে আরও দুটি সুযোগ হারায় বার্সেলোনা। প্রথমে মেসি আর পরে নেইমার বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন। ৮৬তম মিনিটে বার্সেলোনা সমর্থকদের ফের হতাশ হতে হয়; মেসির বাড়ানো বল ধরে শট নিয়েছিলেন জরদি আলবা, কিন্তু কাসিয়াস সেটা ঠেকিয়ে দেন। পরের মিনিটে তার আরেকটি দারুণ নৈপুণ্যে রক্ষা পায় রিয়াল। বাকি সময়েও রিয়ালের রক্ষণে চাপ ধরে রাখে মেসি-সুয়ারেসরা, কিন্তু গোলের দেখা আর মেলেনি। তাতে কি? কাম্প নউয়ের উল্লাস তো আর থামেনি তাতে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধারের পথে যে অনেকটাই এগিয়ে গেল তাদের প্রিয় দল বার্সেলোনা। স্নায়ুচাপ বাড়ানো এই ম্যাচে মোট ১১বার রেফারিকে হলুদ কার্ড দেখাতে হয়; রিয়ালের ৬ জন আর বার্সেলোনার ৫ জন হলুদ কার্ড পান। এই জয়ে ২৮ ম্যাচে বার্সেলোনার পয়েন্ট বেড়ে হলো ৬৮, দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিয়ালের পয়েন্ট ৬৪।