যন্ত্রে পড়তে পারে এমন অর্থাৎ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট জটিলতার কারণে ৩০ লাখের বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে চাকরি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) পক্ষ থেকে বহু আগে থেকেই প্রচলিত কাগজে পাসপোর্টকে এমআরপিতে রূপান্তরিত করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিলো। সবশেষে আগামী নভেম্বরের মধ্যে সব প্রবাসী শ্রমিকের জন্য এমআরপি বাধ্যতামূলক হিসেবে ঘোষণা করা হলেও প্রবাসে কর্মরত বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক এখনো এমআরপি পাননি। খবরটি দুশ্চিন্তার কারণ বটে। যে প্রবাসীদের অর্থ দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে সহায়ক, সেই প্রবাসীদের কোনো কাজে গড়িমশি মানে দেশের সর্বনাশ ডেকে আনা।
মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত ৬০ লক্ষাধিক বাংলাদেশি শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ২০ লাখের এমআরপি রয়েছে। আইসিএও’র বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে মাত্র নয় লাখ এমআরপি সরবরাহ করা সম্ভব হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিশাল অংশ এখন এমআরপি জটিলতা ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। আইসিএও’র বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যেই সব প্রবাসী বাংলাদেশিকে এমআরপি সরবরাহ নিশ্চিত করতে একটি মালয়েশীয় কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছিলো সরকার। চলমান বাস্তবতায় ২৫ নভেম্বর সময়সীমার মধ্যে প্রবাসী শ্রমিকদের হাতে প্রয়োজনীয় এমআরপি পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। এমতাবস্থায় প্রবাসে এমআরপি না পাওয়া প্রবাসীদের মধ্যে যে অনিশ্চয়তা ফুটে ওঠেছে তা বলাই বাহুল্য।
প্রায় ১৬ বছর আগে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি করার নির্দেশনা জারি করলেও এখন পর্যন্ত তা করতে না পারাকে অবশ্যই দায়িত্বহীনতারই নজির। অনেক দেরিতে মালয়েশীয় কোম্পানির সাথে চুক্তি করা হলেও বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে এমআরপি নিশ্চিত করার ব্যাপারে কোম্পানির ব্যর্থতা বা সীমাবদ্ধতার প্রতি লক্ষ্য রেখে বিকল্প উদ্যোগও নেয়া হয়নি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে কর্মরত শ্রমিকরা বড় রকমের আশঙ্কার মধ্যে পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পক্ষ থেকে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এমআরপি করতে ব্যর্থদের চাকরিচ্যুত ও দেশে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে। তবে এখনো সময় পার হয়ে যায়নি। আইসিএও’র বেঁধে দেয়া সময়সীমা পার হতে এখনো অন্তত ৮ মাস বাকি।
সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। সর্বস্তরে ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু সময়মতো এমআরপি দিতে ব্যর্থ হলে দেশের অর্থনীতির মূল শক্তি বৈদেশিক কর্মসংস্থান, শ্রমিক ও শ্রমবাজারের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে এক বছরের মধ্যে দেশের নয় কোটি ভোটারের ডিজিটাল আইডি বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড সরবরাহ ও ডেটাবেজ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলো। অথচ অধিকাংশ প্রবাসীদের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রস্তুত করা সম্ভভ হয়নি দীর্ঘদিনের। যেকোনো উপায়ে আইসিএও’র বেঁধে দেয়া সময়সীমা ২৪ নভেম্বরের আগে সব প্রবাসীর হাতে এমআরপি পৌঁছে দিতে জরুরি ও বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।