আম্পায়ারের উপহার এবং ভারতের সৌভাগ্য

স্টাফ রিপোর্টার: আম্পায়ারের সিদ্ধান্তটা একদমই বাজে। বলটা নিশ্চিতভাবেই কোমরের ওপরে ছিলো না। রোহিত সৌভাগ্যক্রমে আরেকটা জীবন পেলো- দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনাল শেষে টুইটার বার্তায় এমন কথা বলেন, ভারতের সাবেক তারকা ভিভিএস লক্ষণ। গতকাল বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচে অবশ্য আগাগোড়া ভারতের সৌভাগ্য দেখছিলেন ক্রিকেট ভক্তরা। আম্পায়ারের ‘উপহার’ নিয়ে ইনিংসে রোহিত শর্মা করেন আরও ৪৭ রান। মাশরাফির এলবিডব্লিউ’র রিভিউ থেকে অল্পের জন্য বেঁচে যান সুরেশ রায়না। ৩ উইকেট হারিয়ে তখন দলীয় ১৯৬ রান ভারতের। রোহিত শর্মা খেলছেন ৯০ রান নিয়ে। রুবেল হোসেনের বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন তিনি। তা লুফে নেন ইমরুল কায়েস। কিন্তু আম্পায়ার ‘নো’ বল  ঘোষণা দেন। কারণ কোমরের ওপরের উচ্চতায় বল ছিল। তবে প্রশ্ন বলটা কি আসলেই কোমরের ওপরের উচ্চতায় ছিল? টিভি রিপ্লেতে দেখা গেলো বলটা কোমরের নিচেয় থাকতে। রোহিত খানিকটা নিচে  নেমে খেলেছেন। বলটা তখন ছিলো নিম্নমুখি। ভাষ্যকার  শেন ওয়ার্ন  তো বলেই দিলেন, এটা নো বল ছিলো না। খুবই বাজে সিদ্ধান্ত। ক্রিকেট বিশ্বের অনেক সাবেক তারকাও আম্পায়ারের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। টুইট করছেন। এমনকি আর সেই জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি করলেন রোহিত। এটি তার ক্যারিয়ারে ৭ম সেঞ্চুরি হলেও বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি। আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্ত মূলত শুরু হয় সুরেশ রায়নার এলবিডাব্লিউর আবেদন দিয়ে। রায়না তখন ১০ রান ভারতের ১৪৭ রান। তখন থেকেই খেই হারাতে শুরু করে দলের  বোলিং-ফিল্ডিং। সেই সুযোগে ৬৫ রান করে রায়না আউট হলেও শর্মা ১৩৭ রান করে দলকে বড় সংগ্রহের পথ দেখায়।  শেষ পর্যন্ত ভারতের সংগ্রহ ৩০২ রান ৬ উইকেট হারিয়ে। বাংলাদেশের পক্ষে খরচে হলেও একমাত্র সফল বোলার তাসকিন আহমেদ। তার শিকার ৬৯ রানে ৩টি উইকেট।

মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টসে জিতে যে কোন অধিনায়কই ব্যাটিঙের সিদ্ধান্ত নেবেন। ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিও তার ব্যতিক্রম করেনি। অধিনায়কের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করতে শুরু করেন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। কিন্তু টাইগারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং ও ফিল্ডারদের কঠিন পরিশ্রমে ভারতের রানের গতি লাগামছাড়াও হতে পারেনি। ১৬ ওভারে ৭৫ রানের জুটি বাঁধে দুই ওপেনার। সেই সময় বল হাতে পান দলের সহঅধিনায়ক সাকিব আল হাসান। নিজের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই দলকে উপহার দেন উইকেট। এই বিশ্বকাপেই দুটি সেঞ্চুরি হাঁকানো শেখর ধাওয়ানকে ৩০ রানে ফিরিয়ে দেন সাজঘরে। তখনই প্রাণ ফিরে পায় টাইগারদের বোলিং। এরপর ভারতের আরেক ব্যাটিং মেশিন বিরাট কোহলি ক্রিজে আসলেও হতাশ হয়ে ফিরতে হয় তাকে। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রুবেল হোসেন বিরাটকে ৩ রানেই সাজঘরের পথ দেখান। ৭৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ভারত। কিন্তু শুরু থেকেই বাংলাদেশের বিপক্ষে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন রোহিত শর্মা। আজাঙ্কা রাহানেকে নিয়ে হাল ধরেন। কিন্তু রাহানেকেও ১৯ রানে আউট করে তাসকিন তার প্রথম উইকেট তুলে নেন। ১১৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে মহা বিপদেই পড়ে ভারত দল।

কিন্তু এক প্রান্ত আগলে রাখা রোহিত এবার লড়াই শুরু করেন সুরেশ রায়নাকে নিয়ে। চতুর্থ উইকেটে ১২২ রানের জুটি গড়ে তোলেন এই দুজন। তবে এই জুটিতেও ভূমিকা রাখে আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত। রায়না ১০ রানে জীবন পেয়ে শেষ পর্যন্ত ৫৭  বলে করেন ৬৫ রান। হাঁকান ৭টি চার ও একটি ছয়ের মার। তাকে অবশ্য আউট করেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এটি মাশরাফির ক্যারিয়ারে ১৯০তম উইকেট। তবে যেখানে ১১৫ রানে ৩টি উইকেট হারিয়েছিল। সেখানে যখন চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে তখন ২৩৭ রান। বলা চলে অনেকটাই খেই হারানো বোলিং-ফিল্ডিংয়ের সুযোগই নিতে শুরু করে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। এরমধ্যে আম্পায়ারদের আরেকটি বাজে সিদ্ধান্তে রোহিত জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন। শেষ পর্যন্ত তাসকিনের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে তার সংগ্রহ ১২৬ বলে ১৩৭ রান ১৪টি চার ও ৩টি ছয়ের মারে। তিনি যখন আউট হন তখন ভারতের সংগ্রহ ২৭৩ রান ৫ উইকেট হারিয়ে। ভারতের অধিনায়ক অবশ্য দলের জন্য বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ পাননি। তাকে মাত্র ৩ রানেই তাসকিন তার তৃতীয় শিকার বানান। প্রথম  বিশ্বকাপে এটি তাসকিনের সেরা বোলিং। শেষ পর্যন্ত ১০ বলে ২৩ রান করে অপরাজিত থাকেন রবিন্দ্র জাদেজা।

বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফি ৬৯ রানে ১টি, রুবেল হোসেন ৫৬ রানে ১টি ও সাকিব ৫৮ রানে ১টি করে উইকেট নেন। তবে কোন উইকেট না পেলেও ৯ ওভার বল করে মাত্র ৩৫ রান দেন নাসির হোসেন।

Leave a comment