দু কোটি টাকার কেঁচো ভর্তুকি দিয়ে কম্পোস্ট সার উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহী করতে চায় মা এগ্রো
আলম আশরাফ: অস্ট্রেলিয়ান কেঁচোর ত্যাগ করা বর্জ্য। দেখতে ঠিক যেন চাপাতি। ওরই নাম কম্পোস্ট সার বা কেঁচো সার। জমির ঊর্বরতাই শুধু বাড়ায় না, এ জৈব পর পর দু বছর জমিতে প্রয়োগ করলে পরবর্তী বছরে ৪০ শতাংশ রাসায়নিক সার কম দিয়েও আবাদে প্রত্যাশিত ফসল অনিবার্য। এ কারণেই কেঁচো সারের গুণগানে মুগ্ধ এখন কৃষি কর্মকর্তারা। কোথায় পাওয়া যায় এ কেঁচো? কি খেয়ে কেঁচো চাপাতির মতো জৈব সার দেয়? এসব প্রশ্নের জবাব কৃষকদের মাঝে স্পষ্ট না হওয়ায় রোজকার গোয়ালে জমা গবর এখনও ফেলেন গর্তে। এ গবরই যে অস্ট্রেলিয়ান কেঁচোর খাবার তা ক’জনই আর জানেন?
চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড় উত্তরপাড়ার মা এগোর স্বত্বাধিকারী মফিজুর রহমান মাহফুজ গড়ে তুলেছেন কম্পোস্ট সারের খামার। তিনি বললেন, একজন কৃষকের বাড়িতে দুটি গরু আর ৩ হাজার কেঁচে থাকলে দিব্যি তিনি নিখরচায় প্রতিমাসে ১২০ কেজি থেকে দেড়শ কেজি জৈব সার উৎপাদন করতে পারবেন। এ হিসেবে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ওই কৃষক প্রতি বছর ২১ থেকে ২৭ হাজার টাকার সার পাবেন। দুটি গরু আর তিন হাজার কেঁচোর পাশাপাশি দরকার শুধু কৃষকের আন্তরিকতাসহ মাটির তৈরি তিনটি চাড়ি। গরু গবর আর চাড়ি তথা নান্দা না হয় হলো, কেঁচো? তিনি বললেন- মাটি মানুষ তথা দেশের কথা ভেবে আমিই প্রথমে আমার চুয়াডাঙ্গা জেলার আগ্রহী কৃষকদের কেঁচো সস্তায় দিতে রাজি। কেমন সস্তা? বললেন- প্রতিটি কেঁচোর বর্তমান বাজার মূল্য ২ টাকা। শুধু মাত্র জেলার কৃষকদের জন্য ৩৫ পয়সা দরে কেঁচো দিতে প্রস্তুত রয়েছি। কেনো? দেশের প্রতিটি গ্রামে কেঁচো সার উৎপাদন আর উৎপাদিত এ জৈব সার দিয়ে ফসল ফলানোর স্বপ্ন দেখি বলেই স্বাস্তায় কেঁচো ছড়িয়ে দিতে চাই সব খানে। তবে প্রথমে অবশ্যই চুয়াডাঙ্গার প্রতিটি গ্রামে ১০ জন করে কৃষককে স্বস্তায় কেঁচোসহ প্রশিক্ষণ দিয়ে এ সার উৎপাদন ও ব্যবহারের উৎসহ জোগাতে চাই। প্রতিটি গ্রামে ১০ জন করে কৃষককে দিতে হলে জেলার ৩৮০টি গ্রামের জন্য দরকার ১ কোটি ১৪ লাখ কেঁচো। এ কেঁচো যদি সস্তায় দিতে হয় তাহলে মা এগোর ভর্তুকি লাগবে প্রায় দু কোটি টাকা। এ টাকা ভর্তুকি দিয়েও যদি জেলার গ্রামে গ্রামে কম্পোস্ট সার উৎপাদন ও জৈব সার দিয়ে মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর ফসল উৎপাদন করা যায় তাতে খুশিই হবে মা এগো।
মা এগোর স্বত্বাধিকারী কম্পোস্ট সারের খামার তৈরি করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। তিনি বাণিজ্যিকভাবে এ সার উৎপাদনের পাশাপাশি সারাদেশে এ সার উৎপাদনের তাগিদ দিয়ে বলেছেন, যেকোনো বেকার যুবক-যুবতীও এ কাজে আগিয়ে আসতে পারেন। পরিশ্রম? কোনো কাজে নেই। অন্য কাজের তুলনায় এ কাজে আয়েশ অনেক বেশি। কেননা, নান্দা বা চাড়িতে গবর দিয়ে কেঁচো ছাড়তে হবে। কেঁচো তা খেয়ে যে বিষ্ঠা বা বর্জ্য ত্যাগ করবে তার নামই কম্পোস্ট সার। কেঁচো গবর খেয়ে সার তৈরি করবে, আর তখন শুয়ে বসে দিব্যি কাটানো যাবে। আর গবর? এলাকার অনেক গরু খামার রয়েছে। সেখান থেকেও গবর পাওয়া যেতে পারে। গবর কিনে এ সার উৎপাদন করেই মা এগ্রো এগিয়ে যাচ্ছে সাফল্যের লক্ষ্যে। প্রথমে নিজ হাতে করলেও বর্তমানে বেশ কয়েকজন শ্রমিক রয়েছে। উত্তরবঙ্গে এ সারের বড় বাজার। মা এগ্রো থেকে ট্রাক-ট্রাক সার উত্তরবঙ্গে রপ্তানি করা হচ্ছে প্রায় প্রতি মাসে।
কম্পোস্ট সার প্রস্তুতের শুরুটা কেমন ছিলো? আর দশজন বেকারের মতোই চাকরির কথা ভাবতাম। একদিন নিজেই কিছু করি ভেবেই খুঁজে নিলাম ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর পথ। ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়, কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে। এ উক্তিগুলোই মূলত মন্ত্রের মতো কাজে লেগেছে। এর ওর নিকট থেকে শুনে, প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারত থেকে কেঁচো এনে নিজের বাড়ির পাশেই গড়ে তুলি খামার। এ খামারে শুধু কি জৈব সার উৎপাদন হচ্ছে? কেঁচোও বাড়ছে চক্রবৃদ্ধি হারে। ছোট্ট ছোট্ট লাল বর্ণের যেন সাহেব-মেম কেঁচোগুলোও অসাধারণ ভদ্র। দেশি ডাশা কেঁচোর মতো ওরা চাড়ি টপকে বাইরে তো যায়-ই না। একদিক থেকে সাবাড় করে গবর। ওর ভেতর থেকে কেঁচো আলাদা করার সময়? এ দৃশ্যটিও বেশ চমৎকার। এক পাশে টাটকা গবর দিয়ে সেখানে মুহূর্তের মধ্যেই ডেকে নেয়া যায়। এক দেড় ইঞ্চি লম্বা লাল সুতোর মতো কীট বিশেষ পোকাগুলো মানুষের জন্য খুবই উপকারী। দরকার শুধু ওদের কাজে লাগানোর মতো মানসিকতা।