২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার: ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণা করার জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এ দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আগামী ২৫ মার্চ রাত ৮টায় আলোর মিছিল শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এই দাবির পক্ষে ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিরা।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন মহল সরকারের কাছে এ দাবি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার প্রথম মেয়াদকালে যেভাবে জাতিসংঘের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারির স্বীকৃতি আদায় করেছে, একইভাবে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে ২৫ মার্চের স্বীকৃতি আদায় করতে হবে। এজন্য জাতিসংঘে এবং দেশে দেশে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ২৫ মার্চ রাতে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব গণহত্যার শিকার হওয়া মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আলোক প্রজ্জ্বালন করা হবে। তিনি বলেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশের সরকারের কাছ থেকে তাঁরা ২৫ মার্চ গণহত্যার স্বীকৃতি চান। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অগ্নিঝরা মার্চ এ বছর পার করছে ৪৪ বছর। এটি বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যারও ৪৪ বছর। স্বাধীনতা ঘোষণা এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মাস হিসেবে মার্চ মাসটি আমাদের কাছে একাধারে আনন্দ ও গভীর বেদনার। একাত্তরের ২৫ মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এদেশের নিরীহ মানুষের ওপর বর্বর জানোয়ারের মতো ঝাপিয়ে পড়েছিলো। নজিরবিহীন গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার আকাঙ্খাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করতে চেয়েছিল। সেই কালো রাতে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালি নিধন শুরু করেছিল। নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষের ওপর অতর্কিতে হামলা করে হত্যার উল্লাসে মেতে উঠেছিল। অপারেশন সার্চলাইট নামে ওই রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ঐতিহাসিক আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পুলিশ ও সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী ইপিআর -এর সদর দফতরে প্রথম হামলা চালায়। নির্বিচারে হত্যা করে ছাত্র , শিক্ষক ও কর্মচারী ও আইন -শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্যদের। পুরো ঢাকা জুড়ে চালায় তাণ্ডব।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুসারে , ২৫ মার্চ এক রাতেই পিশাচের দল হত্যা করেছিল ১০ হাজার থেকে এক লাখ মানুষ। আর মাত্র নয় মাসে ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে ওরা ৩০ লাখ মানুষ হত্যা করেছে। এই বর্বর ঘটনা সভ্যতার মানচিত্রে সবচেয়ে নৃশংস গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দাবি করতেই পারে। যাতে এই দিনটিতে বিশ্বজুড়ে গণহত্যার বিরুদ্ধে গণসচেতনতা ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। পুরো বিশ্ববাসী যাতে একযোগে স্মরণ করতে পারে গণহত্যায় নিহতদের। দাবি জানাতে পারে গণহত্যাকারীদের বিচারের এবং উদ্যোগ নিতে পারে গণহত্যা অবসানের।
বাংলাদেশে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি অনেক বছর ধরে ২৫ মার্চ গণহত্যার কালোরাত্রি পালনের কর্মসূচি হিসেবে শহীদ মিনারে সমবেত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে আলোর মিছিল নিয়ে নিকটস্থ বধ্যভূমিতে গিয়ে মোমবাতি জ্বালায়। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্মূল কমিটির শাখাগুলো এই কর্মসূচি পালন করছে। আগামী ২৫ মার্চ রাত আটটায়ও কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারে গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে জ্বালানো হবে মোমবাতি।

Leave a comment