স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন ঠেকানোর পরিকল্পনা হিসেবে সরকারি দলের প্রতিটি উদ্যোগ ও পদক্ষেপের সময় পর্যায়ক্রমে কর্মসূচি দেবে বিএনপি। সমঝোতা ছাড়া নির্বাচন হলে ওই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দিন থেকে শুরু করে মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা এবং সর্বশেষ নির্বাচনের দিন কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন সারাদেশে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ঘেরাও এবং একই সাথে ঢাকায় নির্বাচন কমিশন অফিস ঘেরাও কর্মসূচি দেয়া হবে। এছাড়া চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষিত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে লাগাতার ঘেরাও ও অবরোধ এবং সবশেষে দেয়া হবে লাগাতার হরতাল কর্মসূচি। অবশ্য এর আগেই বরিশাল ও চট্টগ্রামে জনসভার পর ঢাকায় ব্যাপক লোক সমাগমের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থান পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি। তবে সরকার যাতে কেবল ঢাকায় মনোযোগ দিয়ে স্বস্তিতে না থাকতে পারে এ জন্য সারাদেশের জেলা ও বিভাগীয় শহরেও অবস্থান কর্মসূচি থাকবে।
ঈদের পর ২২ অক্টোবর বরিশালের জনসভায় বক্তৃতা করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এর পরপরই তিনি চট্টগ্রামে জনসভা করবেন। ২৫ অক্টোবরের পরে সবশেষ জনসভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে ঢাকায়। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জনসভার দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের দাবি, ঢাকার জনসভা থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানার ব্যাপারে সরকারকে আরও একবার আলটিমেটাম দেয়ার কথা চিন্তা হচ্ছে। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে ২৫ অক্টোবরের পর সরকারের অবস্থানের ওপর। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সরকারে নাজুক অবস্থা তৈরি হলে আর আলটিমেটাম নয়; বরং সমাবেশ ও বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে ঢাকায় ব্যাপক লোক সমাগম ঘটানো হবে।
আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঈদের পর ঢাকাসহ সারাদেশে সর্বাত্মক আন্দোলন শুরু হবে। সরকারকে আর কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপাতত নির্বাচন নয়; আন্দোলনই বিএনপির লক্ষ্য। তবে সরকার সমঝোতার মাধ্যমে অচলাবস্থা দূর করতে চাইলে অন্য কথা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপাতত আন্দোলন ছাড়া সামনে কিছু দেখছি না। তিনি বলেন, প্রহসনের নির্বাচন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সব কর্মসূচি দেয়া হবে। ওই আন্দোলনে ১৮ দলীয় জোট সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। মহানগরী বিএনপির আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, এবার কেবল ঢাকা নয়; প্রয়োজনে সারাদেশ অচল করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে সরকারকে ভাবার অনেক সময় দেয়া হলেও তাদের টনক নড়েনি। তারা হয়তো মনে করছে গায়ের জোরেই একটি নির্বাচন করে ফেলতে পারবে। কিন্তু এটা যে কত কঠিন তা সরকার আগামী দিনে বুঝতে পারবে।
এক প্রশ্নের জবাবে খোকা বলেন, আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে বেশি সময় লাগে না। তাছাড়া বিএনপি আন্দোলন করতে পারে কি-না তা আগামী দিনে রাজপথেই প্রমাণ হবে।
নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মেয়াদ শেষের আন্দোলন নিয়ে বিএনপি আর তাড়াহুড়ো করতে রাজি নয়। জনমত তাদের পক্ষে এবং নির্বাচন হলে তারাই ক্ষমতায় যাবে এমন ভাবনা বিবেচনায় রেখেই দলটি কর্মসূচি প্রণয়ন করছে। পাশাপাশি সরকারের মনোভাবের দিকেও নজর রাখছে। জামায়াত ছাড়াও দলের বড় একটি অংশ বেশ কয়েক মাস আগেই সর্বাত্মক আন্দোলনে যাওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। বিশেষ করে হেফাজতের ওপর ক্রাকডাউনের পর এ নিয়ে নানা মহল থেকে চাপ ছিলো। কিন্তু উদারপন্থি বলে পরিচিত অপর অংশটি খালেদা জিয়াকে তাদের যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে, তা ঠেকিয়ে রেখেছেন। তাদের যুক্তি ছিলো; ক্ষমতায় আসার মতো পরিস্থিতি আগাম আন্দোলনের ফলে ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে। সূত্র মতে, ওই অংশের মতামত নিয়েই সরকারকে মেয়াদ পূরণ করতে দিতে রাজি হয়েছেন খালেদা জিয়া। তবে মেয়াদ শেষের আন্দোলনের ব্যাপারে দলটির নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য আছে।