স্টাফ রিপোর্টার: চার দিনেও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের কোনো সন্ধান না মেলায় তার ভাগ্য নিয়ে পরিবারে এবং দলে উদ্বেগ বাড়ছে। পাশাপাশি তাকে নিয়ে চলছে দেশব্যাপি নানা রকম গুঞ্জন। কেউ বলছেন, মাহমুদুর রহমান মান্নার মতো সুবিধাজনক সময়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। কেউ আবার ইলিয়াস আলীর ভাগ্য বরণ করতে হয় কি-না, তা নিয়ে সন্দিহান।
খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনায় চরম উদ্বেগ, হতাশা আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে সালাহউদ্দিন আহমেদের পরিবারের সদস্যদের। তার স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ থানা এবং আদালতসহ বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করে বেড়াচ্ছেন। ক্ষণে ক্ষণে আইনজীবীদের সাথে, পুলিশের সাথে এবং বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলছেন। বিনয়ের সাথে জানাচ্ছেন, যেকোনো মূল্যে তার স্বামীকে ফিরে পেতে চান তিনি। এদিকে, সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে পরিবারটিতে বন্ধ হয়ে গেছে নাওয়া-খাওয়া-ঘুম। সালাহউদ্দিনের ৪ সন্তানের মধ্যে বিদেশে থাকেন দুজন। তারাও বার বার মাকে, তার বাবার জন্য কী করলেন, জানতে চেয়ে অস্থির করে ফেলছেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় হাসিনা আহমেদ জানান, কোনোকিছু চান না; যেকোনো মূল্যে স্বামীকে চান। কোনো রাজনীতি বোঝেন না, কোনো পলিটিক্স লাগবে না; তার শুধু সালাহউদ্দিনকেই লাগবে। সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, কবে খেয়েছেন, সেটাও তার মনে নেই। বাসায় থাকা দু সন্তানও না খেয়ে আছে। পরিবারের সব সদস্যই রোজা রেখেছেন। বিদেশে থাকা দু সন্তানও তাদের বাবাকে যেন ফিরে পায়, দিন-রাত আল্লাহর কাছে সেই প্রার্থনা করছে। তিনিও রোজা রেখেছেন।
দলের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন কি-না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, প্রতিদিনই নজরুল ইসলাম খানের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। দলীয় পরামর্শেই কোর্টে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। দলের পক্ষ থেকে শুধু সান্ত্বনা দিয়ে বলা হচ্ছে, দলের পক্ষ থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করা হবে না। আর সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
এদিকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর যত দিন যাচ্ছে, ততোই বাড়ছে বিএনপিতে আতঙ্ক। এতোদিনেও সালাহউদ্দিনের মতো নেতার হদিস না মেলায় ইলিয়াস আলীর কথাও ভাবতে শুরু করেছেন অনেকে।
বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানান, অন্যান্য দাবির সাথে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ ইস্যুতে ৭২ ঘণ্টা হরতালের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে সালাহউদ্দিনকে না পাওয়া গেলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। অপর একটি সূত্রের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে অভিযোগ করেছেন, সালাহউদ্দিনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে খুঁজে বের করতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে।
এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সালাহউদ্দিন আহমেদ একজন রাজনীতিক। তিনি নিখোঁজ, না গ্রেফতার, এটা তো সরকারকেই স্পষ্ট করতে হবে। কারণ দেশের প্রত্যেক মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ইলিয়াস আলীকে তারা পাননি। এসব তো কোনো ভালো দৃষ্টান্ত নয়। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে কথা বলেছিলেন, গতকাল সালাহউদ্দিনের বিষয়েও প্রায় একইভাবে কথা বললেন। ফলে আতঙ্ক আরো বেড়ে গেছে।
নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, সালাহউদ্দিনের কী দোষ? তিনি দল এবং জোটের পক্ষে কথা বলছিলেন। সেটা তার কথা নয়, জোটের কথা। এরপরও কোনো অপরাধ থাকলে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনলে তো অসুবিধা নেই। এভাবে নিরুদ্দেশ করে রাখা ভালো সংস্কৃতি নয়। দিন যতো যাচ্ছে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ততোই বাড়ছে। এখনই সরকারের উচিত সালাহউদ্দিনের সন্ধান দেয়া।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রাত ১০টায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে একদল শাদা পোশাকধারী লোক রাজধানীর উত্তরার একটি বাড়ি থেকে দু গৃহকর্মীসহ তাকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ এ অভিযোগ করেন। বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের পক্ষে কৌশলগত অবস্থানে থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার খোঁজ পেতে কয়েক দিন আগেই দু গাড়িচালকসহ তিনজনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।