স্টাফ রিপোর্টার: সম্প্রতি মেহেরপুরে বাল্যবিয়ে, নারী নির্যাতন ও যৌতুকের আনুপাতিক হার বৃদ্ধি পেয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে বেরিয়ে এসেছে এ কারণগুলো। যা সংশ্লিষ্ট আইন কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি দেয়া জরুরি।
মেহেরপুর জেলার বৈধ নিকাহ রেজিস্ট্রারের সংখ্যা- মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টানসহ মোট ২৯ জন। তন্মধ্যে মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রার ২৫ জন, হিন্দু নিকাহ রেজিস্ট্রার তিনজন, এবং খ্রিস্টান নিকাহ রেজিস্ট্রার একজন। হিন্দু ও খিস্ট্রান নিকাহ রেজিস্ট্রারদের অধীনে কোনো সহকারী ও এজেন্ট নেই। তবে মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রারদের অধীনে এক থেকে একাধিক সহকারী ও এজেন্ট রয়েছে। কয়েকজন বাদে প্রত্যেক নিকাহ রেজিস্ট্রারই অন্য পেশাসহ মাদরাসায় ও কলেজে শিক্ষকতা করছেন। যে কারণে তারা স্বাভাবিকভাবেই সহকারী বা এজেন্টদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। যদিও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত বাংলাদেশ-২০১১ গেজেটে পরিষ্কারভাবে বিধি উল্লেখ করা হয়েছে।
চাকরি গ্রহণের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ: কোনো নিকাহ রেজিস্ট্রার তাকে যে এলাকার জন্য লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে সেই এলাকা কিংবা ওই এলাকা সংলগ্ন ওয়ার্ড, পৌরসভা বা ইউনিয়নের কোনো মসজিদ, বেসরকারি স্কুল-কলেজ অথবা বেসরকারি মাদরাসা ব্যতীত অন্য কোথাও চাকরি করতে পারবেন না। অথচ কতিপয় নিকাহ রেজিস্ট্রার আধা সরকারি কিংবা এমপিও রেজিস্টার্ড স্কুল-কলেজ ও মাদরাসাতে শিক্ষাকতাসহ এলাকার বাইরেও শিক্ষকতা করছেন। ফলে সহকারী ও এজেন্টরা বাল্যবিয়ের মতো অনেক অঘটন ঘটাচ্ছেন।
সরেজমিন তদন্ত করে দেখা গেছে, জনসাধারণ তার এলাকার নিকাহ রেজিস্ট্রারকে চেনেন না এবং নামও জানেন না। তারা সহকারী বা এজেন্টকেই নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে জানেন। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় এক এলাকার কাজি অন্যত্র চাকরি করার অপরাধে তার লাইসেন্স বাতিল হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজি মাও. আব্দুল জব্বার নিজ এলাকার বাইরে চাকরি করার অপরাধে আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রণালয় গত ০৬/০৫/১০ তারিখে তার লাইসেন্স বাতিল করে এবং চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার হাসেম উদ্দিনের লাইসেন্সও একই কারণে বাতিল করা হয়েছে। অথচ মেহেরপুর জেলায় নিজ এলাকার বাইরে নিকাহ রেজিস্ট্রারগণ চাকরি করলেও জেলা রেজিস্ট্রার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা বহাল তবিয়তে তা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ক্ষতি যা হচ্ছে তা সকলের কাছে অনুমেয়।
নিম্নে মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন কাজিদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি এবং এলাকার বাইরে কর্মরতদের তালিকা দেয়া হলো: মেহেরপুর পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার মো. পিয়ারুল ইসলাম মেহেরপুর সদর উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের নতুন দরবেশপুর মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তার সহকারী অফিস চালান এবং এলাকার কেউ কাজির নাম জানেন না এবং তাকে চেনেন না।
মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার মো. হাবিবুর রহমান। অথচ তিনি শিক্ষকতা করেন কুতুবপুর ইউনিয়নের অধীন উজুলপুর ভৈরব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত। ওই নিকাহ রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে বাল্যবিয়ে রেজিস্ট্রি ও অধিক ফিস গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।
আবু তাহের মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার হওয়া সত্ত্বেও তিনি গাংনী উপজেলার কুতুবপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। জেলার গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজি মোস্তফা কামাল গাংনী মহিলা কলেজে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার রমজান আলী কর্মরত আছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার বুড়িপোতা ইউনিয়নের গোভীপুর রেজিস্ট্রার্ড মাদরাসায়। এছাড়া মো. মঞ্জুর আহম্মেদ মটমুড়া ইউপি, খাদেমুল ইসলাম বামন্দী ইউপি, আব্দুর রব রাইপুর ইউপি, আব্দুর ছাত্তার ষোলটাকা ইউপির নিকাহ রেজিস্ট্রার হলেও সকলেই এলাকার বিভিন্ন রেজিস্টার্ড এমপিওভুক্ত স্কুল ও মাদরাসায় কর্মরত আছেন।