আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় নিয়োগ বদলি ও প্রশিক্ষণ সব কিছুরই নিয়ন্ত্রক শিক্ষক সমিতির কয়েক নেতা!

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতার নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তারা নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে সকল কর্মদিবসে শিক্ষা কার্যালয়ে বসে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য এবং প্রশিক্ষণসহ নানানকাজে খবরদারি ও সাধারণ শিক্ষকদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। এসব শিক্ষক নেতার কারণে শিক্ষা কর্মকর্তাদেরকেও অনেক সময় দুর্ভোগ পোয়াতে হচ্ছে। সম্প্রতি শিক্ষক নেতাদের চাপে বদলির ক্ষেত্রে অনিয়ম করায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হাসানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রমেন্দ্রনাথ পোদ্দারের নামেও আদালত থেকে সমন ইস্যু করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙিয়ে এসব শিক্ষক নেতারা দিনের পর দিন খেয়াল খুশি মতো চললেও তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেফাউল হক, সাধারণ সম্পাদক বাদেমাজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আশরাফুল আলম ও সদস্য এরশাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোল্লা ফেরদৌস উল আলম প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন। ওই তিনজনসহ শিক্ষক সমিতির কয়েকজন নেতা নিজ বিদ্যালয়ের পরিবর্তে অফিস চলাকালে শিক্ষা কার্যালয়ে বসে শিক্ষা কর্মকর্তাদের ওপর খবরদারি ও সাধারণ শিক্ষকদের হয়রানি করে থাকেন। কার্যদিবসগুলোতে বেশির ভাগ সময়ই তারা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কক্ষে বসে থাকেন। কোনো শিক্ষক দাপ্তরিক কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে সরাসরি তাদেরকে কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে দেয়া হয়না। বাধ্য হয়ে সাধারণ শিক্ষকরা এসব শিক্ষক নেতাদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাজ সারেন। বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট হয়ে পড়েছে।
গত ৩ মার্চ থেকে আলমডাঙ্গা উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে প্রাথমিক শিক্ষকদের ১৫ দিনের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। অভিযোগ আছে, ওই প্রশিক্ষণে শিক্ষা কার্যালয় থেকে পাঠানো তালিকা পরিবর্তন করে শিক্ষক নেতাদের দেয়া তালিকায় প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। যাদের এক বছরেরও কম চাকরি আছে এমন শিক্ষককেও শিক্ষক নেতাদের তদবিরে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। অথচ প্রশিক্ষণার্থী বাছাইকালে নিয়ম মানা হলে তা শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক উপকার হতো। অভিযোগকারীরা জানান, মুন্সিগঞ্জ পশুহাট ডা. মকছেদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নাজমা খাতুনকে প্রশিক্ষণের জন্য ইউআরসিতে ডাকা হলেও তিনি প্রশিক্ষণে যেয়ে নিজের নাম পাননি। আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসলেম উদ্দিনকে খুলনায় ছয় দিনের প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষা কার্যালয় থেকে নাম চূড়ান্ত করা হলেও ওইসব শিক্ষক নেতাদের চাপে তা কেটে অন্যজনকে সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।
এদিকে প্রতিবছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সহকারী শিক্ষকদের বদলি করা হয়ে থাকে। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বদলি করার নিয়ম থাকলেও আলমডাঙ্গা উপজেলায় এ পর্যন্ত যে ১৭ জনকে বদলি করা হয়েছে তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিয়ম মানা হয়নি। বদলির ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে বকশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাসুদ রানা বাদী হয়ে ৪ মার্চ চুয়াডাঙ্গার সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হাসানকে আসামি করা হয়েছে। আদালত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নামে সমন ইস্যু করেছেন। তাতে বলা হয়েছে- ওই বদলির ওপর কেন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করা হবে না তা ১০ দিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, শিক্ষক সমিতির নেতাদেরকে কারণে অকারণে কার্যালয়ে বসা ও বিভিন্ন কাজে খবরদারি বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে কর্মকর্তা ও শিক্ষকদেরকে ভবিষ্যতে আরো দুর্ভোগ পোয়াতে হবে। এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি রেফাউল হকের সাথে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।