যারা শিক্ষক, জ্ঞানদান যাদের ব্রত, তাদের কাছে উন্নত আদর্শ ও নৈতিকতাবোধই আশা করে জাতি। শুধু মাধ্যমিক পর্যায়ে নয়, বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও কারো কারো বিরুদ্ধে নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত অভিযোগ উত্থাপন হয়, হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত ৫২ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা অননুমোদিতভাবে কর্মস্থলে অনুপস্থিতই নন, পুনঃপুনঃ তাগিদের পরও তাদের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাওনা ৩ কোটি ৬৭ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা পরিশোধে এগিয়ে আসেননি। অবাক হলেও সত্য যে, এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম বা শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই ঘটেনি। বিভিন্ন উচ্চশিক্ষালয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক শিক্ষা ছুটির নামে বিদেশে গিয়ে আর ফেরেন না। যদি নাইবা ফিরবেন, তাহলে ছুটি নেয়ার সময় কেন তারা সে কথা বলেন না? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য অনুযায়ী, ছুটি শেষ হওয়ার পর ওই ৫২ জন শিক্ষক বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও পাওনা অর্থ পরিশোধ করেননি। তাদের অনেকেই ছুটি নেয়ার সময়েই মনস্থির করেন যে আর ফিরবেন না। কিন্তু তাদের সেই ইচ্ছাটি গোপন রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিকালীন সুযোগ-সুবিধা হাতিয়ে নিতে। এটি কেবল অনৈতিক নয়, বেআইনিও। একজন শিক্ষকের শিক্ষা ছুটি নেয়ার শর্তই হলো, ছুটি শেষে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরবেন। না ফিরলে দীর্ঘদিন ধরে পদটি মূলত অকার্যকর হয়ে পড়ে। শূন্য ঘোষণা করতেও আইনি জটিলতায় পড়ে শিক্ষাদান ক্ষতিগ্রস্ত হয় দীর্ঘ সময়। এ কারণেই শিক্ষকতার মতো পেশায় নিজেকে যুক্ত করে ব্যক্তি স্বার্থে অন্ধ হয়ে তথা নিজের সুবিধা সুযোগকেই প্রাধন্য দেয়াকে নিশ্চয় নীতিবান বলা চলে না। অবশ্যই একজন আদর্শ শিক্ষকের শুধু মেধাবী হলে চলে না, তাকে নীতিবানও হতে হয়। নৈতিকতার স্খলণকারীদের কি উন্নত চরিত্রের মানুষ বলা যায়? অভিযুক্ত শিক্ষকদের নাম-ঠিকানা শুধু ওয়েবসাইটে দেয়ার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ সীমিত রাখার বদলে নৈতিকতার স্খলণ রোধে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা করতে হবে। এ ধরনের অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে গড়িমশির কারণেই বিষয়টি যে রেওয়াজে রূপ নিয়েছে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। ক্ষতিকর প্রবনতা রোধে যতো দ্রুত বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নেয়া যাবে, ততোই কল্যাণ।