স্টাফ রিপোর্টার: বাউল সম্রাট লালন শাহের গানে মুখরিত হয়ে উঠেছে ছেঁউড়িয়া। অন্য গুরু-সাধুদের পাশাপাশি নতুন খেলাফতপ্রাপ্ত সাধুরা চরম আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন। এবার খেলাফত পেয়েছে এমন সাধুরা সুর আর বাদ্যে ভাব-জগতের অপরূপ সাজে দোল পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত হয়ে গলা ছেড়ে গেয়েছেন: দয়াল চাঁদ আসিয়া আমার পার করে নিবে, এমন সুভাগ্য আমার কবে হবে। কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ফকির লালন শাহের ছেঁউড়িয়ায় দোল উত্সবের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার দোল পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত হয় পুরো লালন আখড়াবাড়ি।
ছেঁউড়িয়ায় আসা লালন ভক্ত কবি বাবলু জোয়ারদার বলেন, লালনের বিশ্ব মানবতার বাণী আজ আনুষ্ঠানিক মাত্রা পেয়েছে। বিশ্বব্যাপি তার মানবতার আলো জাতিতে জাতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজবাড়ির কালুখালি উপজেলা থেকে আসা ফকির মোতালেব বলেন, বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী- দোল পূর্ণিমায় বৃন্দাবনের নন্দন কাননে ভগবান কৃষ্ণ তার সখী রাধিকা দেবীকে নিয়ে রঙের খেলায় মেতেছিলেন। আবার এ দোল পূর্ণিমা তিথিতেই চৈতন্য মহাপ্রভু জন্মগ্রহণ করেন বলে একে গৌর-পূর্ণিমা নামেও অভিহিত করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ফকির লালন শাহ ভক্ত-শীর্ষদের নিয়ে ছেঁউড়িয়ায় মহা ধুমধামে দোল উত্সব করতেন।
লালন দোল উত্সবের দ্বিতীয় দিনে গতকাল সকালে সাঁইজীর সমাধি প্রাঙ্গণে দেখা মিলে যুগল খেলাফতপ্রাপ্তদের সাথে। তাদের নাম বিষ্ণু ফকির ও কনিকা ফকির। তারা খেলাফত নিয়েছেন অনুকূল ফকিরের কাছ থেকে। খেলাফত গ্রহণের দিনের কথা বর্ণনা করে তারা বলেন, সেদিন আমাদের দুজনকে নতুনরূপে সাজিয়ে দিয়েছিলেন অন্য সাধুরা। লালন সমাধির খাদেম মহম্মদ আলী বলেন, খেলাফত নেয়ার আগে একজন গুরুর নিকট ভক্ত হতে হয়। গুরুর ইচ্ছানুযায়ী নিতে হয় খেলাফত। খেলাফত নেয়া মানে দুনিয়া ত্যাগ করা। পুরোটাই গুরুজীর পথে চলে যাওয়া। খেলাফত পাওয়াতো বহু সাধনার ব্যাপার। বছরের পর বছর ধরে অনেক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে তবেই না খেলাফত পাওয়া যায়।
এবার ছেঁউড়িয়া আখড়াবাড়িতে প্রতি খেলাফতপ্রাপ্ত সাধুর সাথে অন্তত ১৫ থেকে ২০ জন সঙ্গী এসেছেন। এছাড়া ভারত, নেপাল, ভুটান, ফ্রান্স, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন সাধু ও লোকসংস্কৃতির অনুরাগীরা। আয়োজকরা বলেন, এবার পাঁচদিনে ১০ থেকে ১২ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে ছেঁউড়িয়ায়। এদিকে গত বুধবার রাতে লালন উন্মুক্ত মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫ দিনব্যাপি দোল উত্সব প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ। আলোচনা পর্বে সভাপতিত্ব করেন লালন একাডেমীর সভাপতি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন। একই মঞ্চে প্রথম পর্বে আলোচনা ও দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় লালন সঙ্গীত ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উন্মুক্ত মঞ্চে গান-বাজনা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। হাজার হাজার দর্শক-শ্রোতা নেচে-গেয়ে আত্মস্থ করেন লালনের গান।