খালেদা জিয়ার সাথে ১৬ কূটনীতিকের বৈঠক

স্টাফ রিপোর্টার: অনেকটা নাটকীয়ভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত ১৬ কূটনীতিক। দু মাস ধরে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর সাথে কূটনীতিকদের বৈঠক চলে প্রায় দু ঘণ্টা। এ সময় তারা চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সহিংসতা, মানবাধিকার ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকক্‌ কূটনীতিকদের পক্ষে একটি বিবৃতি পড়ে শোনান। পরে বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আমাদের দেয়া পূর্বের বিবৃতি এবং জাতিসংঘ প্রদত্ত বিবৃতিগুলো উদ্ধৃত করে আমরা চলমান সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছি। আমরা আস্থা স্থাপনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে উৎসাহ দিয়েছি। একইসাথে বাংলাদেশে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা, প্রগতি, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছি। বাংলাদেশের বন্ধু এবং অংশীদার হিসেবে আমরা বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে বৈঠকের সুযোগকে স্বাগত জানাই।

আমরা সকলপক্ষের প্রতি আমাদের অভিন্ন প্রত্যাশা ব্যক্ত করা অব্যাহত রাখবো। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, কোরিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড এবং তুরস্কের দূতরা ছিলেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ কাইয়ুম বৈঠকে অংশ নেন। এর আগে সন্ধ্যা ৬টা ৩৬ মিনিটের দিকে একটি শাদা রঙের মাইক্রোবাসে করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাটসহ অন্য কূটনীতিকরা খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকের এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীসহ বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নির্বাচনকেন্দ্রিক অতীত অঙ্গীকার, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী বিরোধী জোটের সহনশীল আচরণ, সঙ্কট উত্তরণে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশসহ বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়। এছাড়া, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলের আন্দোলনকে সহিংসভাবে দমনের জন্য সরকার দলীয় মন্ত্রী-এমপিদের নানা হঠকারি ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে উৎসাহমূলক বক্তব্য, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক প্রভাবদুষ্ট বক্তব্যের বিভিন্ন ফুটেজ দেখানো হয়। এ সময় বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও চলমান আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের ভিডিও দেখানো হয়। এসব ভিডিও ফুটেজ এবং তথ্য-উপাত্ত নিয়ে একটি ফাইল কূটনীতিকদের কাছে দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে কূটনীতিকরা বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি উত্তরণে নিজেদের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। তবে তারা বিএনপির নেতৃত্বের বক্তব্য শুনেছেন বেশিরভাগ সময়। বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয় সূত্র মনে করে, সার্বিক পরিস্থিতিতে কূটনীতিকদের কাছে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পেরেছে বিএনপি। এ সময় বিএনপির আন্দোলনের প্রেক্ষিত, দাবির যৌক্তিকতা ও বর্তমান পরিস্থিতির নেপথ্যের কারণ সম্পর্কে নানা তথ্য ও জনমতের চিত্র তুলে ধরা হয়। সূত্র আরও জানায়, কূটনীতিকরা যাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে না যান এ ব্যাপারে সরকারের তরফে তাদের ওপর চাপ ছিল। ফলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কূটনীতিকরা একজোট হয়েই খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করতে তার গুলশান কার্যালয়ে যান।

ওদিকে দুটি মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। আজ নিম্ন আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে মামলা দুটিতে। খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও কার্যালয়ে ফিরে আসার নিশ্চয়তা পেলে বেগম জিয়া আদালতে যাবেন। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, আইন সবার জন্য সমান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এ গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের জন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা নিম্ন আদালতে আবেদন করেছেন। একই সাথে তা স্থগিতের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, বৃহস্পতিবার এই আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

দু নেত্রীকে চিঠি: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইইউ, জাপানসহ ১৬ কূটনীতিক বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিঠি দিয়েছেন। একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, চিঠিতে সংলাপে বসার পাশাপাশি সহিংসতা বন্ধের আহ্বানও জানানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা চিঠিতে মত প্রকাশ, অবাধ চলাফেরা, সভা-সমাবেশসহ শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার স্থান সঙ্কুচিত হয়ে আসায় উদ্বেগ জানিয়েছেন দূতরা। চিঠিতে তারা যেকোনো উন্নয়ন শান্তি ও স্থিতিশীলতা ছাড়া সম্ভব নয় বলেও উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লেখা চিঠিতে চলমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে দরিদ্র মানুষের ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন। ১৬ কূটনীতিকের লেখা চিঠিতে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে দু নেত্রীকেই অভিন্ন বার্তা দিয়েছেন দূতরা