হরতাল–অবরোধে চুয়াডাঙ্গার পানহাটগুলোয় দিন দিন পানব্যাপারীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে
খাইরুজ্জামান সেতু: হরতাল-অবরোধে চুয়াডাঙ্গার পানহাটগুলোয় দিন দিন পানব্যাপারীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। যে সমস্ত ব্যাপারীরা পান কিনতে আসছেন তারা লোকসান গুনছে বলে দাবি তুলে পানের প্রত্যাশিত মূল্য দিতে চাচ্ছে না। তাদের অভিমত হরতাল-অবরোধের কারণে গাড়ি ভাড়া বেশি দিয়ে পোষাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর এলাকার চাষিরা পথে বসবে বলে মন্তব্য অধিকাংশ পানচাষির।
চুয়াডাঙ্গার পান প্রসিদ্ধ হিসেবে পরিচিত। পানচাষের মাধ্যমে এলাকার বহু কৃষক তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। সংসারে এনেছেন সচ্ছলতা। অথচ অবরোধ-হরতালের উত্তাপ এখন তাদের ওপরও পড়তে শুরু করেছে। চুয়াডাঙ্গার পান দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি হয়। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে পানচাষিরা বিক্রির জন্য পানহাটে তুললেও প্রত্যাশিত দাম না পেয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। তারা বলছেন, যে সময় পানের দাম থাকে চড়া, এখন সেই সময়েও পান নিয়ে মাথায় উঠছে হাত। পানের হাটে যে পরিমাণ পানব্যাপারী আসেন অন্য সময় কিন্তু এখন তার অর্ধেকও নেই।
চুযাডাঙ্গা বড়বাজার পানহাটে পান কিনতে এসসেছিলেন পানব্যাপারী সারজেত। তিনি চুয়াডাঙ্গা থেকে পান কিনে শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি করেন। তিনি বললেন, কি আর করবো। চলমান হরতাল-অবরোধে ব্যবসায় লোকসান দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠছি। পরিবহন খরচ দ্বিগুণেরও বেশি। তার পর রাস্তায় দুশ্চিন্তার শেষ নেই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানের ব্যবসা করেও যদি লোকসান গুনতে হয় তাহলে করবো কীভাবে? শেরপুরের দানু শেখ বললেন, হরতাল-অবরোধে পেটের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পান কিনতে আসছি তারপর আবার গাড়ি ভাড়া বেশি। কোনো সময় দু পয়সা লাভ হচ্ছে আবার কোনো সময় লোকসান হচ্ছে। এভাবে কি পান কিনতে আসা যায়? আমাদের মতো কিছু ব্যাপারী আছে তারা ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করছেন। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে ঘরে বসে আছেন। ময়মনসিংহের মুক্তার আলীরও অভিন্ন অভিমত। যখনই পান কিনে অন্যত্রে নিচ্ছি তখনই গাড়ি ভাড়া বেশি নিচ্ছে। গাড়িমালিক ও ড্রাইভারদের অজুহাত হরতাল-অবরোধ।
চুয়াডাঙ্গার জাফরপুর গ্রামের পানচাষি শফিকুল ইসলাম বললেন, হাটে পানের ব্যাপারীর সংখ্যা বেশি থাকলে দামও চড়া হয়। পান তো ঠিকই বরজ থেকে ভাঙতে হচ্ছে। হাটে নিয়ে গুটিয়ে কয়েক ব্যাপারী যে দাম বলছেন তাতে পান তাদের ঝুঁড়িতে সাজিয়ে দিয়ে আসতে হচ্ছে। তিনি বললেন, আমার মতো অধিকাংশ পানচাষিকেই পানে লোকসান গুনতে হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আকন্দবাড়িয়া গ্রামের পানচাষি আব্দুর মালেক জানান, হাটে ব্যাপারী নেই বললেই চলে। যারা আসছেন তারা হরতাল-অবরোধের কারণে গাড়ি ভাড়ার কথা বলে পানের দাম দিচ্ছেন না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পথে বসতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা বড়বাজার পানহাট ইজারাদার মো. বিকাশ জানান, পানে লোকসানের কথা স্বীকার করে জানান। পানচাষি আসছেন পানও প্রচুর আমদানি হচ্ছে, কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে পানের ব্যাপারী নেই। এ কারণেই দাম পানের দাম নেই। এমন কি পানের দাম না থাকাই পানচাষিরা খাজনা পর্যন্ত দিতে চাচ্ছেন না। এতে আমাদেরও লোকসান হচ্ছে।