স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ডিজিটাল উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়ন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতায় দেশের সশস্ত্র বাহিনীকেও আধুনিকায়ন করা হবে। দেশের উন্নয়ন কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন শান্তি ও শৃঙ্খলা। কিন্তু সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ শুধু উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে ব্যাহত করে না দেশের অখণ্ডতা ও শান্তিশৃঙ্খলার জন্য হুমকি সৃষ্টি করে। কক্সবাজারের রামুতে নবগঠিত দশম পদাতিক ডিভিশনের দরবার হলে সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, “ভিশন ২০৩০ এর আলোকে সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিকায়নে বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। দশম পদাতিক ডিভিশনের প্রতিষ্ঠা সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও যুগপোযুগি করার বর্তমান সরকারের যে প্রয়াস তারই একটি দৃষ্টান্ত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সংবিধান গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় সশস্ত্র বাহিনীকেও হুমকি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পেট্রলবোমা মেরে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর নিন্দাও জানিয়েছেন। এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দশম পদাতিক ডিভিশনের চৌকস সেনাবাহিনীর দলের অভিবাদন ও সশস্ত্র সালাম গ্রহণ করে। পরে নবগঠিত দশম পদাতিক ডিভিশনের পতাকা উত্তোলন করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী রামুর সেনানিবাসে পৌঁছালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, দশম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং মেজর জেনারেল আতাউর হালিম সরওয়ার হাসান তাকে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান এইচ এম এরশাদ, গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ, নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম.ফরিদ হাবিব, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল মো. এনামুল বারি, সংসদ সদস্য বর্গ, কূটনৈতিকগণ এবং উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী সাড়ে ১২টার দিকে হেলিকপ্টার যোগে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রামু ত্যাগ করেন।
দেশের প্রধান বাণিজ্যিক ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে প্রথম পাঁচ তারকা মানের হোটেল ৱ্যাডিসন ব্লুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল দুপুর সোয়া দুইটার দিকে নামফলক উন্মোচন করে ৱ্যাডিসন ব্লুর আনুষ্ঠানিক যাত্রার সূচনা করেন তিনি। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে প্রথমে কক্সবাজারের রামু পৌঁছান। সেখানে নির্ধারিত কর্মসূচি শেষ করে পুনরায় হেলিকপ্টারে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসের হেলিপ্যাডে অবতরণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী সেনানিবাস থেকে সড়ক পথে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরত্বে নবনির্মিত হোটেল ৱ্যাডিসন ব্লুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ সেনাকল্যাণ সংস্থার অর্থায়নে প্রায় পাঁচশ কোটি টাকা ব্যয়ে এই হোটেল নির্মাণ করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগরীর লালখান বাজার ও কাজীর দেউড়ি এলাকার মাঝামাঝি এবং চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের উল্টো দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চার দশমিক ১৮ একর জায়গায় এই পাঁচ তারকা মানের হোটেলটি নির্মাণ করেছে সেনা হোটেল ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড।
প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হোটেলটির প্রথম পাঁচ তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ৮৬ হাজার বর্গফুট। পরবর্তী ফ্লোরগুলোর প্রতিটির আয়তন ২০ হাজার বর্গফুট। ২৪৯টি কক্ষের হোটেলটিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মতো ভিআইপিদের জন্যও রয়েছে পৃথক স্যুট কক্ষ। প্রাচ্যের রানী খ্যাত চট্টগ্রামের পাহাড়-নদী-সমুদ্রের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে মিল রেখে সবুজবান্ধব নানা আয়োজনে হোটেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। হোটেলের ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত বিশেষ র্যাপের মাধ্যমে ঘুরে ঘুরে উঠতে পারবে গাড়ি। ষষ্ঠ তলাতেই থাকছে সার্কুলার কার পার্কিং ও সুইমিং পুল। পাঁচ তারকা এই হোটেলে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যকে ধারণ করে মেজবান হল নামে পরিচিত দুটি ব্যাংকুইট হল করা হয়েছে। প্রতিটিতে একসঙ্গে মেজবানে অংশ নিতে পারবেন এক হাজার অতিথি। হোটেলের ভেতরে বাইরে মিলে এক হাজার অতিথির গাড়ি পার্কিংয়ের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সাতটি লিফট, দুটি লং টেনিস কোর্ট, একটি ডিসকো থিক, মিনি শপিং মার্ট, ব্যাংকসহ পাঁচ তারকা হোটেলের যাবতীয় সব সুযোগ-সুবিধা আছে এই হোটেলে। ২০১১ সালের ১৭ জুলাই র্যাডিসন ব্লু ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। হোটেলটি নির্মাণে সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে তিন বছর। পহেলা বৈশাখ থেকে হোটেলটির বাণিজ্যিক যাত্রা শুরুর কথা রয়েছে।