ধিক্কার শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী ক্রিকেটারদের!!

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় আল আমিন টিম ম্যানেজমেন্টের চোখ ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে সারারাত হোটেলের বাইরে কাটিয়ে অস্ট্রেলিয়ান সময় সকাল ১১টায় হোটেলে ফেরেন। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার সারারাত খোঁজাখুঁজি করেও আল আমিনের কোনো হদিস পাননি। আইসিসির দুর্নীতি দমন ও নিরাপত্তা ইউনিট (আকসু) বিষয়টি তদন্ত করে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টকে অবহিত করে।
বিসিবিসূত্রে জানা গেছে, আল আমিন যখন সকালে হোটেলে ফিরেছেন তখন তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন না! এ ঘটনায় সাথে সাথে আল আমিনকে দল থেকে বরখাস্ত করে দেশে ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তার পরিবর্তে শফিউল ইসলামকে দলে পাঠানো হচ্ছে।
আল আমিনের এ শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়, লজ্জাকর ও পুরো জাতির সাথে প্রতারণার শামিল বলেই মনে করছেন দেশের ক্রীড়ামোদীরা। জাতীয় দলের যেকোনো প্রতিনিধির কাছ থেকেই এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। দেশের ক্রীড়ামোদীরা তার এ আচরণে বিক্ষুব্ধ এবং তারা প্রত্যাশা করছেন বিশ্বকাপের মর্যাদার আসনে বাংলাদেশের সম্মান এভাবে নষ্ট করার অপরাধে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড দ্রুত আল আমিনের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করবে।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব ক্রিকেটের এক সময়ের অন্যতম পরাশক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখন অর্থ সঙ্কটের কারণে ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখিন। অর্থের অভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা এখন আর আগের মতো ক্রিকেটে আসতে চায় না। আরেক টেস্ট খেলুড়ে দেশ জিম্বাবুয়ের অবস্থা আরও ভয়াবহ। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটাররা ক্রিকেট খেলে কোনো টাকা-পয়সাই পান না। রাস্তায় ডাব বিক্রি করে সংসার চলে এমন খেলোয়াড়ও রয়েছে জিম্বাবুয়ে দলে। ক্রিকেটের এক সময়ের আরেক পরাশক্তি ও সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান দলের আর্থিক অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয় এবং পাকিস্তানের বর্তমান ক্রিকেট খেলোয়াড়রাও আর্থিকভাবে মোটেও সচ্ছল নন। অথচ এদের তুলনায় সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র বাংলাদেশের ক্রিকেটের। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ভাগ্যবদল শুরু হয়েছে এবং বর্তমানে আর্থিক দিক থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং ক্রিকেটাররা এখন একেবারে রমরমা অবস্থায়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সার্বিক মান ও দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির তুলনায় জাতীয় দলের বর্তমান ক্রিকেটাররা আর্থিকভাবে অনেক অনেক গুণ বেশি সুবিধা এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবেও অনেক অনেক গুণ বেশি পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন। অথচ সেই তুলনায় দেশের প্রতি এ ক্রিকেট খেলোয়াড়দের কমিটমেন্টের অভাব এখনও প্রকট। তারই বহির্প্রকাশ আল আমিন। এর আগে শুধু দেশের সেরা খেলোয়াড়ই নয় বিশ্বের ৱ্যাঙ্কিকে থাকা শীর্ষস্থানীয় হিসেবে বিবেচিত সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধেও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। ব্যবস্থাও নেয়া হয়। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বাধ্য হয় তাকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বহিষ্কার করতে। তারও আগে বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগের দিন রাতে বাংলাদেশ দলের সব খেলোয়াড় শৃঙ্খলা ভেঙে এক সতীর্থ খেলোয়াড়ের বাসভবনে সারারাত তার জন্মদিনের উৎসব পালন করে সকালে হোটেলে ফেরেন। এ ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছিলো। ক্রীড়াঙ্গনে এ বিষয়টি তখন ব্যাপকভাবে সমালোচিত হলেও বিসিবি তখন ছিলো নিশ্চুপ এবং খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই তারা নিতে পারেনি। দলের আরেক খেলোয়াড় রুবেল হোসেনও কিছুদিন আগে যে ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন তা কোনোভাবেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য সুখকর নয়। ক্রিকেট খেলোয়াড়দের একের পর এক এ ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় ক্রীড়ামোদীদের মাঝে প্রশ্ন, কেন আমাদের ক্রিকেট খেলোয়াড়রা জাতির সাথে বারবার এমন আচরণ করছে?
আমাদের এসব খেলোয়াড়দের কেউ কেউ তাদের স্বপ্ন ও কল্পনাকেও হার মানিয়ে যাওয়া প্রাপ্ত আর্থিক সুবিধা, দামি গাড়ি, বিলাসবহুল বাড়ি ও রাতারাতি বনে যাওয়া তারকা ইমেজের খ্যাতির চাপ বহন করার মতো মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। আমরা ক্রিকেটের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত বিশ্বের যতোটা পরিচিতি পেয়েছি, অতোটা আর অন্য খেলাতে পায়নি। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ আফগানিস্তানকে হারিয়েছে। এরপর বৃষ্টির কারণে অস্ট্রোলিয়ার সাথে খেলাটি পরিত্যক্ত হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশের ঝুলিতে এক পয়েন্ট যোগ হয়েছে। বিশ্বকাপ জয়ের মতো সুবিধাজনক দল আমাদের না হলেও আমাদের ক্রিকেট দলের সকল সদস্যের নিকট দায়িত্বশীলতা তো আশা করতে পারি।

Leave a comment