রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধানের চাপ

স্টাফ রিপোর্টার: চলমান রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধানের চাপ বাড়ছে। সহিংসতার জন্য নিন্দা জানানোর পাশাপাশি আলোচনার মাধ্যমেই রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে সুশীল সমাজ, ক্ষমতাসীন ও বিরোধী জোটের বাইরের রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এমনকি আন্তর্জাতিক মহল পর্যন্ত তাগিদ দিচ্ছে। ফলে সমস্যাটি সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের নয় রাজনৈতিকভাবে তা প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। এজন্য দমন নয়, সংলাপ করেই সঙ্কট নিরসন করতে হবে বলেও দাবি দলটির। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে ৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া সহিংসতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ৪২ দিনের টানা কর্মসূচিতে সহিংসতায় ক্রস ফায়ারসহ প্রায় ৯২ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে ৫২ জনের প্রাণ গেছে অগি্নবোমায় দগ্ধ হয়ে। আহত হয়েছে সহস্রাধিক। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে এই সময় অগি্নসংযোগ ও ভাঙচুরের শিকার হয়েছে অন্তত এক হাজার ৮৯টি যানবাহন। পাশাপাশি সহিংসতায় সবচে বড় ক্ষতির শিকার হয়েছে দেশের অর্থনীতি। ফলে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে সব শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের। একই সাথে বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলও। সুশীল সমাজ, দু জোটের বাইরের রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এমনকি আন্তর্জাতিক মহল এটিকে রাজনৈতিক সমস্যা উল্লেখ করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য ক্ষমতাসীন ও বিরোধী জোটকে পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে এটিকে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ বলে প্রচার করছেন ক্ষমতাসীনরা। তবে বিএনপির এখনো আশা সংলাপের মাধ্যমে সঙ্কট নিরসন হবে। চলমান আন্দোলনে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার পর সরকার ৭ দিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিলেও তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় বিভিন্ন মহল সোচ্চার হন। ব্যবসায়ীরা জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে এসে আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধানের কথা বলেন। এছাড়া ব্যবসায়ী বিভিন্ন সংগঠন একের এক কর্মসূচি পালন অব্যাহত রেখেছে। এদিকে নাগরিক সমাজ সংলাপের মাধ্যমে সঙ্কট নিরসনের দাবিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে তারা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে চিঠি দিয়েছে। এছাড়া কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং বিকল্পধারা সংলাপের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা এবং পালন করছে। আন্তর্জাতিক মহলও সংলাপের বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করে সংলাপে বসার পরামর্শ দেন। এছাড়া জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও সঙ্কট নিরসনে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। শিগগিরই সংলাপের দূতিয়ালি করতে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো বাংলাদেশে আসবেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, দেশ-বিদেশের দায়িত্বশীল প্রতিটি মহল এ সমস্যা রাজনৈতিক উল্লেখ করে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথা বলছেন। সঙ্গত কারণে সমস্যাটিকে সন্ত্রাস বা জঙ্গি তৎপরতা বলে চালিয়ে দেয়ার সরকারি চেষ্টা ধোপে টিকছে না। রাজনৈতিকভাবে সঙ্কট সমাধানের চাপ দিনে দিনে বাড়ছে। ফলে এই ইস্যুতে সরকার একা হয়ে পড়ছে।
সূত্র জানায়, নাগরিক সমাজের সংলাপের উদ্যোগকে ভালো চোখেই দেখছে বিএনপি। তারা চায়, দেশের সমস্যা সমাধানে নাগরিক সমাজ আরো সক্রিয় হোক। এর মাধ্যমে সরকারের ওপর একটি চাপ তৈরি হবে, যা বিদেশিদের নজরে আসবে বেশি। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের উদ্যোগ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা। অবশ্য কেউ কেউ বলছেন সুশীল সমাজের ওইসব প্রতিনিধির সাথে বিএনপির যোগাযোগ আছে। এছাড়া নেতারা দাবি করছেন, বিএনপির কাছে খবর আছে, ভারত এখন নিরপেক্ষ অবস্থানে আছে। তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কারো পক্ষ নেবে না। তারা জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো প্রায় একই সুরে কথা বলবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, চলমান সমস্যাটি রাজনৈতিক। এটিকে রাজনৈতিকভাবেই নিষ্পত্তি করতে হবে। এজন্য সরকারকেই হতে হবে সবচেয়ে বেশি আন্তরিক। এতোদিন তারা সংলাপে বসতে না চাইলেও দেশি ও বিদেশি মহল যেভাবে চাপ দিচ্ছে তাতে সরকারকে সংলাপে বসতেই হবে।

Leave a comment