রাজধানীতে ৯ গাড়িতে আগুন : সিরিজ বোমা বিস্ফোরণ

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধের ৪২তম ও ৭২ ঘণ্টা হরতালের দ্বিতীয় দিন

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধের ৪২তম ও ৭২ ঘণ্টা হরতালের দ্বিতীয় দিনে আবারও সহিংস ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আগুন দেয়া হয়েছে ২০টি গাড়িতে। এতে অন্তত ১৫ জন দগ্ধ ও আহত হয়েছে। এদিকে সারাদেশে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের ধরপাকড় অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল সন্ধ্যার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বিরোধী জোটের আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এদিকে হরতালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিল, সড়ক অবরোধ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি। ৬ষ্ঠ দফা হরতালের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীতে গণপরিবহন অনেকটা স্বাভাবিক থাকলেও দূরপাল্লার যানচলাচল ব্যাহত হয়েছে। সীমিত আকারে কিছু কোচ চলাচল করলেও যাত্রী সংখ্যা ছিল কম। হরতাল অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর বাইরে ঝিনাইদহ, চিলমারী, মেলান্দহ, বগুড়া, গাজীপুর, লক্ষ্মীপুর, পীরগঞ্জ, শেরপুর, রাজশাহী, নোয়াখালী, ভাণ্ডারিয়া, কিশোরগঞ্জ, মীরসরাই, চট্টগ্রাম ধামরাই, খুলনাসহ অন্তত ২০ জেলা থেকে সংহিংসতার খবর পাওয়া গেছে।
রাজধানীতে ৯ গাড়িতে আগুন: রাজধানীর পৃথকস্থানে আটটি গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আগুনের বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে। সকাল ৮ টায় মগবাজার রেলগেটে গাজীপুরগামী প্রভাতি পরিবহনের একটি বাসে দৃর্বৃত্তরা আগুন দেয়। সকাল ৮ টায় কাজীপাড়ায় গ্রামীণ পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে বাসটিতে আগুন ধরে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ইস্কাটন লেডিস ক্লাবের পাশে একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। প্রায় একই সময় শেরাটন হোটেলের পাশে অপর আরেকটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয়া হয়। দুপুর ১টায় মিরপুরের প্রশিকা ভবনের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়া হয়। রাত সোয়া ৮টায় বাড্ডা এলাকায় একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রাত পৌনে ৯টার দিকে মিরপুরে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ৮টায় কদমতলীর ধোলাইপাড়ে (ঢাকা-মেট্রো-জ-১১-২৯৭৭) নম্বরের বোরাক পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে ওই বাসটি সম্পন্ন পুড়ে যায়। রাজধানীর টিটিপাড়া এলাকায় রাত ৮টা ১০ মিনিটের দিকে সুপ্রভাত পরিবহনের বাসে এ আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। রাত পৌনে ৯টার দিকে মিরপুরে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া বেলা ১টায় গুলশান ২ নম্বরের গোল চত্বরে দুর্বৃত্তরা পরপর দুইটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে বাবুল আহমেদ, মোতালেব এবং ওবাইদুর রহমান নামে তিন পথচারী আহত হন। পথচারীরা তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় জজকোর্ট এলাকায় একাধিক ককটেল বিস্ফোরিত হয়। রাতে মিরপুরের চৌরাঙ্গীর সামনে ও পুরবী সিনেমা হলের সামনেও একাধিক ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এর আগে দুপুরে সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট মন্ত্রণালয়ের সামনে একাধিক ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এছাড়া বনানীর কাকলী ও মিরপুরের আইডিবি ভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। রাত ৯টায় শ্যামলী রিং রোডে রাজধানী পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটেরর সামনে একটি বাসে দুটি ককটেল এবং চানখার পুল মোড়ে, তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া রাতে বগুড়ায় পণ্যবাহী ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে ট্রাকের চালক ও সহযোগীসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। রাত ৮টার দিকে জেলার শাজাহানপুর উপজেলার বেতগাড়ী এলাকায় বাবলু সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া মহাস্থানগড়ে একটি মাছবাহী ট্রাকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
এদিকে রংপুর নগরীর সুপার মার্কেটে দুর্বৃত্তদের ছোড়া ককটেল বিস্ফোরণে নারীসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে মার্কেটের তিনতলা থেকে ককটেলটি ছোড়া হলে এ ঘটনা ঘটে। রাজধানীর পুরান ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের সামনে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে পরপর চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।