গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণই সব শক্তির উৎস

একটি রাষ্ট্রে যদি রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করে, তাহলে বলার অপেক্ষা রাখে না যে- সে রাষ্ট্র নিশ্চিতভাবেই উন্নয়নবঞ্চিত হয়ে সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়ে। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাও তদ্রূপ! প্রায় দেড়মাস ধরে চলা অবরোধ ও হরতালে দেশের সাধারণ নাগরিকের জীবন যেমন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তেমনি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে দেশব্যাপি ব্যাপক নাশকতায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠারও শেষ নেই। মানুষ চরম আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এছাড়া শিক্ষা-স্বাস্থ্য-উৎপাদন-অর্থনীতিসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি খাতের অবস্থা যে শোচনীয়, সে কথা বলাই বাহুল্য। অবস্থার চাপে পড়ে মানুষ একই সাথে আতঙ্ক-হতাশা এবং রাজনীতির প্রতি ক্ষোভের কথা বলতে শুরু করেছে।
অস্থিতিশীল পরিস্থিতি অবসানের উদ্যোগের বিপরীতে রাজনৈতিক দলগুলো যখন পরস্পরবিরোধী অবস্থানে ক্রমেই দূরে সরে যায়, তখন সাধারণ মানুষের সামনে অনিশ্চয়তা ছাড়া আর কিছুই থাকে না। বর্তমানে দেশের বড় দু রাজনৈতিক দলের অবস্থান এতোটাই দূরত্বে যে, অচিরেই এ ভয়াবহতা থেকে মুক্তির কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না। বিদেশি কূটনীতিক এবং বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর প্রতিনিধিদের সমঝোতা প্রতিষ্ঠার আহ্বানেও কর্ণপাত করছে না কোনো দল। সঙ্গত কারণে, দেশের বড় দু রাজনৈতিক দলের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষের দাবি, বড় দু রাজনৈতিক দলের জেদাজেদির কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটা বলা অসঙ্গত নয় যে, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটালে সাধারণ মানুষকে এ ভয়াবহতার মুখোমুখি হতে হতো না। দগ্ধ হতে হতো না প্রতিহিংসার আগুনে। আমরা ভেবে পাই না, যে জনগণের অধিকার আদায় কিংবা মুক্তির কথা বলে রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি ঘোষণা করে তাদেরই কেন প্রতিপক্ষ করে তোলে! তাহলে এ রাজনীতি কিসের স্বার্থে এ প্রশ্ন করাটা নিশ্চয়ই দোষের হতে পারে না; তাছাড়া জনগণেরও এটা জানার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে বলে আমরা মনে করি। জনগণকে ‘বলির পাঠা’ বানিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার অপপ্রয়াস গভীর পরিতাপ ছাড়া আর কি-বা হতে পারে। প্রতিবেদনে উল্লিখিত সাধারণ নাগরিকের ভাষ্যমতে একটি বিষয় অত্যন্ত স্পষ্ট যে, দেশের জনগণ বর্তমানে দু রাজনৈতিক দলের কাছে জিম্মি। অথচ বড় দু দলের নেতাদের সদিচ্ছার জাগরণ ঘটলে, এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা তেমন কোনো কঠিন ব্যাপার নয় বলেই প্রতীয়মান হয়। কিন্তু এর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হওয়া কিংবা রাজনীতিতে জনগণের স্বার্থ বিবেচিত না হলে জনগণ রাজনীতিকদের কর্মকাণ্ড সন্দেহের চোখে দেখলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকে না। মানুষ আর কতো সহ্য করবে এটাও তো রাজনীতিকদের বিবেচনায় নেয়া দরকার। যেহেতু তারা জনগণের কল্যাণেই রাজনীতি করেন বলেই আমরা জানি। যে দেশে সাধারণ মানুষ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যদিয়ে দিন অতিক্রম করেন, সেদেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব সেটিও আমাদের ভাবনায় আসে না। সঙ্গত কারণে এ পরিস্থিতির অবসানই প্রত্যাশা। লক্ষ্য করা গেছে, দেশ-বিদেশের বহু মানুষ, রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান প্রধান দু দলকে অনুরোধ জানিয়েছে সঙ্কট সমাধানের জন্য। গণতান্ত্রিক পন্থায়ও সঙ্কট উত্তরণে আলোচনার বিকল্প নেই, এটা যে রাজনীতিকরা জানেন না তা নয়। তাহলে কেন এ কালক্ষেপণ? দেশের সাধারণ মানুষ যেমন মনে করে বর্তমান পরিস্থিতির দায় রাজনৈতিক দলগুলোর, তেমনি আমরাও মনে করি সমঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্বও রাজনীতিকদের। দু দলকেই একে অন্যকে ছাড় দিয়ে আলোচনায় বসার ক্ষেত্র তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণই সব শক্তির উৎস। তাই জনগণকে জিম্মি করা বা তাদের ওপর রাজনৈতিক ব্যর্থতার দায়ভার চাপিয়ে দেয়া কিছুতেই শুভ হতে পারে না। আমরা উভয় দলের নেতাদের বলতে চাই, সমস্যার উৎস খুঁজে তা প্রতিকারের উদ্যোগ নিন। পরস্পরের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করুন। দেশ ও জনগণের ক্ষতি সাধন করে কোনো স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্য থাকলে তা পরিহার করে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার পথেই হাঁটা সমীচীন। জনরোষ গড়ে ওঠার আগেই বড় দু দলের বোঝা দরকার, জনগণও ধৈর্যের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে। তাই এ দম বন্ধ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির প্রত্যাশাই এখন গণদাবি।