বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘ কাজ শুরু করেছে। এ বিশ্বসংস্থার সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো এ বিষয়ে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তারানকো ঢাকায় এসে সঙ্কট নিরসনের প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন; কিন্তু তাতে সফল হতে পারেননি। এবার তিনি আটঘাট বেধেই মাঠে নামছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি ইতোমধ্যেই মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালের সাথে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। উপরন্তু, এদেশের সরকার ও বিরোধী পক্ষের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন তিনি। অন্যভাবেও তৎপরতা চলছে অনেক। তারানকো যেদিন (বুধবার) নিশা দেশাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সেদিনই নিশার সাথে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম জিয়াউদ্দিন সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাথে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির আসন্ন বৈঠক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
অর্থাৎ আমরা দেখছি, শুধু জাতিসংঘ নয়, অন্য অনেকভাবেই বাংলাদেশের চলমান সঙ্কট নিরসনের উদ্যোগ ও তৎপরতা চলছে। কয়েকদিন আগে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক শেষে বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে তাদের কর্মের পরিণতি সম্পর্কে গভীরভাবে ভাবতে হবে। তারানকো, গিবসনসহ আন্তর্জাতিক মহলের যেসব ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের সঙ্কট নিরসনে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সংশয় নেই। তারা সৎ উদ্দেশেই কথা বলছেন বা কাজ করছেন। তাদের উদ্যোগকে কেউ যদি আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো মনে করে থাকেন, তাহলে তারা ভুল করবেন। এটা তো ঠিক, দেশে এখন যা চলছে, তা কোনো মানদণ্ডেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতিদিন আগুনে দগ্ধ হচ্ছে মানুষ, তাদের অনেকে মারাও যাচ্ছেন। শুধু গণমৃত্যুই নয়, দেশের অর্থনীতি, শিক্ষাব্যবস্থা, পরিবহন খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেমে এসেছে বিপর্যয়। এ অবস্থাকে এক কথায় খাদের কিনারা বললে অত্যুক্তি হবে না। এটি বোধগম্য, বিশ্ববাসীর অভিভাবক হিসেবে জাতিসংঘ এ অবস্থায় নিশ্চুপ থাকতে পারে না। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের জন্ম দিয়েছে বিশ্ববাসী। সেই সংস্থা যে কোনো দেশের প্রাকৃতিক বা রাজনৈতিক দুর্যোগে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হবে, এটাই স্বাভাবিক।
আমরা আশা করবো, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে তারানকো সঙ্কট নিরসনে যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন, আমাদের দু প্রধান দল তাতে অংশ নেবে। বুঝতে হবে, জাতিসংঘ আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর এমন কিছু চাপিয়ে দেবে না, যা বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। দু দলের কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে, এমন তৃতীয় পন্থার কথাই হয়তো তিনি বলবেন। অতীতে দেখা গেছে, জাতিসংঘ অথবা বিদেশি কোনো বন্ধু মধ্যস্থতার উদ্যোগ নেয়ার পর তাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়েছে। এটা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না। কারও উপদেশ গ্রহণযোগ্য না হলে তা প্রত্যাখ্যান করারও একটা ভদ্রতাসম্মত রীতি আছে। আমরা সেটাও ভুলে গেছি। এবার যেন তেমনটা না হয়। তারানকোর কথা আমাদের শুনতে হবে মনোযোগ দিয়ে। এরপর তা গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যানের প্রশ্ন আসবে। মোদ্দা কথা, বর্তমান সঙ্কটকে আর জিইয়ে রাখা যাবে না। যথেষ্ট হয়েছে। এবার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা। সেটা নিজস্ব উদ্যোগে অথবা কারও মধ্যস্থতায়।