মাজেদুল হক মানিক: পৃথিবীতে কতই না প্রেমের ঘটনা। প্রেমে সফল কিংবা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে অনেকই গড়েছেন ইতিহাস। হ্যাঁ মুরগির সঙ্গে ছাগলের প্রেমের বিষয়টিও একটি ইতিহাস হতে যাচ্ছে। সেদিন কথা হচ্ছিল পাশের বাড়ির ছাগল ন্যাড়ার সঙ্গে। কুশল বিনিময়ের এক পর্যায়ে সে কেঁদেই ফেললো। কান্নার কারণে জানতে চাইলে কান্না আরো বেড়ে গেলে। চোখ মুছে বললো তার দুঃখের কথা।
প্রতিবেশী মুরগি টুনির সঙ্গে তার দীর্ঘ দিনের প্রেম ভালবাসা। তবে পরিণতির দিকে গড়াইনি। টুনির ভাই দেশী মোরগ এবং পিতা লেয়ার মোরগ তাদের প্রেমে বাঁধ সাধেন। তাদের একটিই যুক্তি টেকো ছাগলের সঙ্গে তার বিয়ে হলে তারা সমাজে মুখ দেখাবে কি ভাবে? তার তাইতো প্রেমের পথে বার বার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে টুনির পরিবার।
এইতো সেদিন সকালে টুনির সাথে নির্ধারিত ডেটিং করতে গিয়ে কি মারটিই না খেলো হতভাগা প্রেমিক ন্যাড়া ছাগল। নির্জনে প্রেমে মজে যখন তারা সুখ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিল ঠিক তখনই পাড়ার কিছু ছাগল, বাছুর এবং রাজহংসি এসে প্রতিরোধ করলো। পাড়ার দাদারা বলে কথা। এই দাদাদের পাড়ার কোন মুরগির সঙ্গে এভাবে প্রেম করা যাবে না বলে দিল প্যাদানি। বেচারা ন্যাড়া ছাগলের কি অবস্থা। দৌড়ে বাড়িতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হলো।
টুনিকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে এসব নির্যাতনের পাশাপাশি একবার জেলও খেটেছে ন্যাড়া ছাগল। স্কুল গেটে টুনির সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে কয়েকদিন আগে ধরা পড়ে। পরিবারের চাপে পড়ে টুনি বলতে বাধ্য হয়ে তাকে প্রতিদিনই ইভটিজিং করে। ব্যাস আর যাই কোথায়। মোবাইল কোটে দেড় দিনের জেল।
এতো গেল জেল জরিমানা। টুনিকে খুশি করতে টাকাও খরচ হয়েছে অনেক। সেদিন টুনির জন্য বাজার থেকে পালং শাক, লাল শাক ও বাসমতি ধানের চাউল কিনে এনেছিল ন্যাড়া। এগুলো মুরগি টুনির সবচেয়ে বেশি প্রিয়। টুনির জন্য মাঝে মধ্যে উই পোকা ধরতে কতই না খাটতে হয় বেচারা ন্যাড়ার।
টুনির জন্য জন্মদিনের উপহার ব্রয়লার ফিড, বিশেষ দিনের কার্ড আর মাঝেমধ্যেই উপহার সামগ্রী জোগাড় করতে হয়ে হিমশিম খাচ্ছিল ন্যাড়া। পিতার পকেট কেটে নেওয়া টাকায় ভালই চলছিল। তবে গত বছর ঘটেছে বিরাট এক ট্রাজেডি। যা ন্যাড়ার মন থেকে কোন দিনও মুছে যাবে না। গত বছর বিশ্ব ভালবাসা দিবসের আগের দিন রাতের ঘটনা। ভালবাসা দিবস বলতে কথা। প্রেমিকা টুনিকে একটি উপহার না দিলে চলেই না। প্রেমের স্বার্থকতো এখানেই। অনেক কষ্ট করে জোগাড় করা টাকা দিয়ে টুনির পছন্দের বাসমতি চাল এবং উই পোকা জোগাড় করেছিল ন্যাড়া। দিনের বেলায় সুযোগ হয়নি। তাইতো রাতের আঘারে টুনির বাড়িতে দিতে গিয়েছিল। কিন্তু সে জানতো না তার পিতা পাহারা বসিয়েছে। টুনির বাড়ির পোষ্য কুকুর টমি অবস্থান করছিল ঘরের সামনে। ন্যাড়াকে দেখেই সে তাড়তে শুরু করলো। টমির ঘেউ ঘেউ ডাকে ঘুম ভাঙ্গলে পাড়ার সকলে। অপরাধ বিবেচনায় রাতেই বসলো শালিস বৈঠক। শাস্তি স্বরুপ ন্যাড়াকে গ্রামছাড়া করা হলো। পরদিন বিশ্ব ভালবাসা দিবসে টুনির বিয়ে দেয়া হলো পাশের গ্রামের ব্রয়লার মোরগ টগবগির সঙ্গে। ভেঙ্গে গেল ন্যাড়ার ভালবাসার সাজানো বাগান। তাইতো প্রতি বছর এই দিনটি আসলেই ন্যাড়ার দুচোখ বেয়ে শুধুই অশ্রু ঝরে। মনে পড়ে টুনির সঙ্গে প্রেমের সুখ স্মৃতি।
ন্যাড়ার নাম করণের পেছনে রয়েছে আরেকটি ইতিহাস। ছোটবেলায় তিড়িং বিড়িং করে নাচতে নাচতে ঘর ভেঙ্গে সে জলন্ত চুলোয় লাফ দিয়েছিল। আগুন পুড়ে যায় তার মাথার সামনের অংশ। সেখানে আর চুল গজাইনি। তখন থেকে বাপ মা আদর করে তার নাম রেখিছিল ন্যাড়া।
সম্মানিত পাঠক, এই লেখাটি শুধু আনন্দ দেয়ার জন্য। কোন বাস্তবতার সাথে মিল নেই। যদি কোনভাবে কারো কোন ঘটনার সঙ্গে মিলে যায় তা নিতান্তই কাকতালীয়।