কোথাও স্বস্তি নেই। শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। সারাদেশ যখন মৃত্যুপুরি, তখন স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তার দাবি তোলা দুরস্ত, যেন ভাবাটাও অপ্রতুলতা। অথচ পড়শি দেশের দিকে তাকালে গণতন্ত্র চর্চার অপরূপ চেহারাই যেন উঠে আসে ঘুরে ফিরে। অবশ্যই ওটা ওদেরই গড়া।
পড়শি দেশটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় পরিচালিত। কেন্দ্রীয় মসনদে বিজিবি। দেশটির রাজধানী রাজ্যের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন দল ৭০টির মধ্যে মাত্র ৩টি আসন পেয়েছে। আম আদমি পার্টি পেয়েছে বাকিটা। আর দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিদিন রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে থাকা কংগ্রেস? একটাও পায়নি। এরপরও নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক নেই, নেই মেনে নেয়া বা না নেয়া নিয়ে কটূক্তি। ভোটাধিকার প্রয়োগকারীদেরও তেমন নালিশ নেই। নির্বাচনে নিরপেক্ষ পরিবেশ নিয়েও বিতর্ক নেই। প্রার্থীদেরও নেই বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল। আছে জয়-পরাজায় তথা ভোটারদের মন বুঝতে পারা না পারা নিয়ে দলগুলোর আত্মসমালোচনা। পরাজিতদের মধ্যে বিগত দিনের ভুল শনাক্ত করে সুধরে আগামীদিনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের তোড়জোড়। আর বিজয়ীদের মধ্যে? নির্বাচনী ইস্তেহার তথা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পাশাপাশি পরাজিতদের পরাজয়ের শিক্ষা থেকে আত্মঅহঙ্কার পরিহারের মানসিকতা গড়ে তোলার আহ্বান। এ আহ্বান দলীয় সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে শীর্ষ নেতার নাকানিচুবানি। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, এ থেকে আমরা শিক্ষা নেবো কবে? নাকি দাউ দাউ করে আগুনজ্বলা ঘরের চেয়ার রাখা এবং পাওয়ার লড়াইয়েই পদপিষ্ট হতেই থাকবো আমরা আমজনতা?
গণতন্ত্র চর্চার অন্যতম প্রথম শর্ত অবাধ শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার। এ অধিকার নিশ্চিত করতে যেমন নিরপেক্ষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারই একমাত্র পদ্ধতি হতে পারে না, তেমনই বিরোধীদের দমন পীড়নকেও সুস্থ ধারার রাজনীতি বলা চলে না। প্রতিবেশী দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, রাজনৈতিক দলীয় সরকারের অধীনেই আস্থা রাখার মতো নির্বাচন সম্পন্ন হয়, হচ্ছে। কীভাবে? সেখানে নির্বাচন কমিশনই শুধু নয়, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদেরও দলীয় সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে রাখার মতো পদ্ধতি প্রণয়ন করে তার বাস্তবায়নসহ জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। ওরা পেরেছে আমরা পারিনি বলেই বিশ্বাস-অবিশ্বাস তথা আস্থাশীলতা আর আস্থাহীনতার দোলাচলে ঘুরে ফিরে উঠে আসে দু দলের একই চেহারা। দেশের বৃহত দুটি রাজনৈতিক দলের কোনটি ভালো কোনটি মন্দ? সেটা না হয় আমরা আমজনতা প্রকাশ্যে নাই বললাম, ভালোটা বা ভালোরা কেন ভাবতে পারে না- ভোটার ভালোদেরই ভোট দেয়, নির্বাচিত করে। ভালো হলেই ভোট দেবে, নির্বাচিতও করবে! এ ভাবনার মূল ধারায় পৌঁছুতে হবে আমাদের।
আমাদের দেশের সূর্যসন্তানেরা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে খেলতে অস্ট্রেলিয়ায় গেছে। টাইগাররা কেমন করবে? খেলায় কতোটা উন্নতি হয়েছে? প্রস্তুতিতে হারলো কেন? এসব নিয়ে যখন তুমুল আলোচনা হওয়ার কথা, তখনও তা ম্লান। ওটাও কি এ হিংসার আগুনে কেড়ে নেয়নি? তা হলে স্বস্তিটা কোথায়?
পুনশ্চ: ভোটাধিকারের জন্য আর লাঠি-লগি-বৈঠা কিংবা পেট্রোলবোমা দেখতে চায় না আমজনতা।