আতঙ্কে শিশুসন্তান নিয়ে মায়েদের দৌড়াদৌড়ি

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে হঠাত আগুন আগুন বলে চিৎকার

 

আলম আশরাফ/কামরুজ্জামান বেল্টু: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে হঠাত আগুন আগুন বলে চিৎকার। ওয়ার্ডের মধ্যে শুরু হলো ছোটাছুটি। বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার। মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। যে যার মতো আগুনের হাত থেকে রক্ষা পেতে সব কিছু ফেলে শুধু কোলের সন্তানকে তড়িঘড়ি করে নিয়ে নিচের দিকে দৌড় দেন। ওই সময় চলছিলো দেশব্যাপি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, নাশকতার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গায় স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক-নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন। মানববন্ধনে লোকজন আগুনের বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত খবর দেয় দমকল বাহিনীকে। কেউ কেউ ওপরে ওঠেন আগুন দেখার জন্য। পরে ওয়ার্ডে গিয়ে জানা গেলো আগুন নয়। অক্সিজেন গ্যাস সিলিন্ডার পরে গিয়ে বিকট শব্দ হয়ে ধোয়া বের হওয়ায় ছড়ি পড়ে এ আতঙ্ক। ঘটনাটি ঘটে গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে।

কীভাবে গ্যাস সিলিন্ডার পড়ে গেলো? এ প্রশ্ন খুঁজতে জানা গেলো ধোপা শুকুর আলীর সহকারী কামরুল ওয়ার্ডের ময়লা বেডসিট নিয়ে যাওয়ায় তাতে বেধে গ্যাস সিলিন্ডার পড়ে এ ঘটনাটি ঘটে।

এ বিষয়ে শিশু ওয়ার্ডে কর্মকরত সিনিয়র স্টাফ নার্স লতিফা খাতুন জানান, ধোপা আগুন আগুন বলে চিৎকার দিতেই রোগীর লোকজন দ্রুত ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে পড়ে। এসে দেখি গ্যাস সিলিন্ডার পড়ে গিয়ে গ্যাস বের হচ্ছে। রোগীর লোকজনকে ফেরানোর চেষ্টা করি কিন্তু কোনো কথা কানে না নিয়ে তড়িঘড়ি করে নিচে নেমে যান। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। ঘটনার বর্ণনা শুনে তার ফিরে যান।

শিশু রোগী চুয়াডাঙ্গা তেঘরি গ্রামের আব্দুল্লাহর মা কনিকা খাতুন, হানুর বাড়াদির হালিমার মা মুন্নি খাতুন, জীবননগর দেহাটি গ্রামের মুজাহিদের পিংকি খাতুন, আলমডাঙ্গার পাঁচকমলাপুরের লাবণীর মা বিনা খাতুনসহ একাধিক অভিভাবক জানান, আমরা সন্তানদের নিয়ে যখন ব্যস্ত তখনই বিকট শব্দ হয়ে ঘরে মধ্যে অন্ধকার হয়ে যায়। এ সময় আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনে সব কিছু ফেলে কোলের সন্তান নিয়ে নিচে নেমে যায়। পরে জানতে পারি গ্যাস সিলিন্ডার পড়ে গিয়ে এ শব্দ হয়েছে। গ্যাস ধোঁয়ার মতো বের হওয়ায় কে যেন আগুন আগুন বলে চিৎকার দেয়। তাই সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালের লোকজন ছোটাছুটি করতে থাকে।

ধোপা শুকুর আলী দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে বেডসিট পরিষ্কার করার কাজ করে আসছে। তার সহকারী হিসেবে কামরুল নামের এক ব্যক্তি গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিশু ওয়ার্ডে বেডসিট নিয়ে যাওয়ার সময় গ্যাস সিলিন্ডার বেধে পড়ে গিয়ে তার চেঁচামেচিতেই এ আতঙ্ক সৃষ্টি হয়।

এদিকে ধোপা শুকুর আলীর বিরুদ্ধে একাধিক স্টাফ নার্স অভিযোগ করে বলেছেন, এর আগেও তিনি এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন। তিনি বেডসিট নিয়ে সময়মতো ফেরত দেন না। রোগীর লোকজন বেডসিট চাইলে দিতে পারি না। অনেক সময় বেডসিট দিতে না পারায় তাদের সাথে কথা কাটাকাটিও হয়ে থাকে। বিষয়টি একাধিকবার তাকে অভিহিত করলেও কোনো ফল মেলেনি। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জনের প্রতি সুদৃষ্টি কামনা করেছে ভুক্তভোগী মহল।