বিল-বাঁওড়, নদী-নালা, খাল পানিশূন্য হওয়ার আগেই বেদখলের খবর এখন অনেকটাই গা-সওয়া। সরকারি খাস জমিও কৌশলে গ্রাসের খবর নতুন নয়। এখন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিজমাও দিব্যি দখল করে নেয়ার অভিযোগ অহরহ পাওয়া যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রায় ডজন খানেক পরিবার তাদের জমি নিয়ে ভয়াবহ সঙ্কটে পড়ে প্রতিকারের আশায় রাজপথে নেমেছে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। একই দিনে প্রকাশিত পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ঐতিহ্যবাহী কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের বেদখল হওয়া জমি পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা প্রতিরোধের মুখে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। এতেই স্পষ্ট, জমি দখলদারদের আধিপত্য কতোটা। যদিও পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তির অন্ত নেই।
চুয়াডাঙ্গায় একাধিক চক্র রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- অন্যের জমির কাগজপত্রে ত্রুটি খুঁজে কৌশলে হাতিয়ে নেয়াই তাদের কাজ। অবাক হলেও সত্য যে, একটি চিহ্নিত চক্র চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিশাল খেলার মাঠও গ্রাস করার চেষ্টাই শুধু করেনি, অনেকটা পথও হেঁটেছিলো ওরা। অবশ্য চুয়াডাঙ্গার শিক্ষানুরাগী সচেতনমহল বিষয়টি জানার পর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠটি শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। না, এ ধরনের ভূমিদস্যূদের বিরুদ্ধে আইনগত শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার তেমন তথ্য এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। শুধু কি ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ? দেবত্ব সম্পত্তিও হাতিয়ে নেয়ার জন্য একাধিক সঙ্ঘবদ্ধ চক্র সক্রিয়। চুয়াডাঙ্গার কয়েকটি এলাকার বেশকিছু দেবত্ব বা পীরত্ব সম্পত্তি নিয়ে আইনি লড়াইও চলছে। দেশের ঐতিহ্যবাহী কেরু অ্যান্ড কোম্পানির আলমডাঙ্গা ঘোলদাড়ি খামারের বিশাল মাঠের বৃহত অংশ? গড়ে উঠেছে একটি গ্রাম। গোটা গ্রামেরই জমিই বিরোধপূর্ণ। পাশের আবাদি জমিও বেদখলের অভিযোগ। এ জমি বেদখল মুক্ত করতে গিয়েই প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পড়তে হয়েছে প্রতিরোধের মুখে। এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের পৌর ডিগ্রি কলেজপাড়া, হাজরাহাটির মাঠসহ ঘোড়ামারা ব্রিজের অদূরবর্তী এলাকার বেশ কিছু জমি জবরদখলের অভিযোগ তুলে কমপক্ষে ১১টি পরিবারের নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমেছেন। সংবাদ সম্মেলনে জমি দখলসহ নানাভাবে হুমকি-ধামকির বিস্তারিত বর্ণনা দেয়ার পাশাপাশি সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সাথে সাথে প্রতিকার চেয়ে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও পেশ করেছে। পেশকৃত স্মারকলিপিতে এবং সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়েছে, চিহ্নিত ৫ জন ব্যক্তিই অতোগুলো পরিবারের জমি জবরদখলের পাঁয়তারা করছে। কখনো রোপণকৃত ফসল চষে দিচ্ছে, কখনো বর্গাচাষিকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে জমিতে পা না রাখার হুমকি দিচ্ছে। জমির মালিকদেরও খুনসহ নানা হুমকি-ধামকি দিয়ে তটস্থ করে তুলছে। শুধু তাই নয়, জমিতে যাওয়ার কারণে বাগবিতণ্ডার জের ধরে একের পর এক মামলাও দায়ের করেছে তারা। এসব মামলার মধ্যে মিথ্যা চাঁদাবাজিরও অভিযোগ করা হয়েছে বলে আন্দোলনরত পরিবারগুলোর তরফে দাবি তুলে সুষ্ঠু তদন্তেরও দাবি জানানো হয়েছে। অবশ্য অভিযুক্তদেরও দাবি জমির মালিকানা দাবি করার মতো বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। সালিস-নালিশও হয়েছে। এখন ওরা রাস্তায় নেমেছে। পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তির তথা বৈধ-অবৈধের বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যম অবশ্যই আইন-আদালত।
জোর করে জমি দখলদারদের বিরুদ্ধে দ্রুত শক্ত পদক্ষেপ নিতে না পারলে ভূমিদস্যুচক্রের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, জমি জবরদখলদারদের অধিকাংশেরই মূল অস্ত্র জমির নিরীহ মালিকদের হায়রানির মধ্যে ফেলে কিছু আদায় করা। কিছু ক্ষেত্রে বিচারে দীর্ঘসূত্রতাও ভূমিদস্যুরা সুযোগ হিসেবে কাজে লাগায়। আর রেকর্ডে নাম ভুল? জমি নিয়ে বিরোধের অন্যতম কারণ বটে। এসব সমস্যা থেকে জমির প্রকৃত মালিকদের নিস্তার দিতে নালিশ নিষ্পত্তি দ্রুত সম্পন্ন করার বিশেষ উদ্যোগ নেয়া দরকার। জমি জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগেও স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের সদস্যদের প্রভাবমুক্ত আন্তরিকতা প্রয়োজন। প্রয়োজনে যুগোপযোগী পদ্ধতি প্রণয়নেও সরকারের শীর্ষ পদস্থদের তাগিদ দিতে হবে।