সৌদিতে শ্রমবাজার খুলেছে : নিয়োগ প্রক্রিয়া নিধারণে আসছে প্রতিনিধি দল

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার ওপর গত ৭ বছর ধরে চলে আসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সৌদি সরকার। ঢাকায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গতকাল রোববার থেকেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। এখন কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া নির্ধারণে সৌদি আরবের মন্ত্রী পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল চলতি সপ্তাহেই ঢাকায় আসছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, সৌদি আরবের শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপমন্ত্রী ড. আহমেদ আল ফাহিদ রোববার টেলিফোনে রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শহিদুল ইসলামকে সৌদি আরবের শ্রমবাজার পুনরায় খুলে দেয়ার কথা জানান। সৌদি উপমন্ত্রী আরও জানান, বাংলাদেশীদের জন্যে এই শ্রমবাজার পুনরায় খুলে দিতে দেশটির রয়েল কোর্ট রোববারই অনুমোদন দিয়েছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়োগ করার প্রক্রিয়া নির্ধারণের লক্ষ্যে সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশ সফরে আসবে বলে দেশটির উপমন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে অবহিত করেন।

এদিকে গতকাল রোববার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক বার্তায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম বলেন, সৌদি আরবের রাজকীয় সভা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেছে। দেশটির শ্রম মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের উপমন্ত্রী আহমেদ এফ আলফাহিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার খুঁটিনাটি বিভিন্ন বিষয় চূড়ান্ত করতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সৌদি আরবের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত।

বিবৃতিতে দাবি করা হয় যে, ২০০৯ সালের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের মাধ্যমে শুরু হওয়া নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ফলেই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বাংলাদেশী কর্মীদের জন্যে সৌদি শ্রমবাজার রোববার থেকে খুলে গেল। তার সফরের ফলোআপ হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরব সফর করেছেন। চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি রিয়াদে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর সৌদি শ্রমমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আবদেল বিন মুহাম্মদ জানান যে, তার দেশের শ্রমবাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্যে উন্মুক্ত করতে সৌদি আরব প্রস্তুত রয়েছে। বৈঠকে সৌদি শ্রমমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে মানবসম্পদের বিষয়ে নিবিড় সহযোগিতা করতে চায় বলে জানিয়েছেন। বিবৃতিতে দাবি করা হয় যে, সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার খুলে যাওয়ার ঘোষণা বাংলাদেশের এক বিরাট কূটনৈতিক সাফল্য। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি মাইলফলক হয়েই থাকবে। সৌদি শ্রমবাজার খুলে যাওয়ায় বাংলাদেশের পেশাজীবী, দক্ষ, আধা দক্ষ ও অদক্ষ বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থানের জন্যে বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। সরকারি হিসাবে বর্তমানে ১২ লাখ ৮০ হাজার বাংলাদেশী সৌদি আরবে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। এই হিসাবে সৌদি আরবই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। ২০০৮ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক নিত সৌদি আরব। শ্রমবাজার খুলে যাওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যেতে একজন শ্রমিকের ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হবে না বলে ২৫ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, সৌদি আরব যেতে শ্রমিকদের প্র্যাকটিক্যালি তেমন কোনো খরচ নেই। চাকরিদাতাই লেভি, ভিসা, যাতায়াত এবং মেডিকেলসহ অন্যান্য খরচ বহন করবে। এর আগে ২৪ জানুয়ারি নিষেধাজ্ঞা ওঠার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে সৌদি শ্রমমন্ত্রী আবদেল ফকিহ রিয়াদে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সৌদি আরবে কোন্ কোন্ খাতে কিভাবে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক নিলে দুই দেশই লাভবান হবে সে বিষয়ে একটি কর্মকৌশল ঠিক করতে হবে। কাজ নিয়ে সৌদি আরব আসার আগে আগ্রহীরা যাতে নিজের দেশে প্রশিক্ষণ পায় এবং অনলাইন ভেরিফিকেশনের সুযোগ রেখে স্বচ্ছতার সঙ্গে তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায় সে ব্যবস্থা করার কথাও বলছিলেন তিনি।