পুলিশকে সাহায্য করুন : প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে সমাজে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সন্ত্রাস প্রতিরোধে দল মত নির্বিশেষে পুলিশকে সহযোগিতা করতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজারবাগে পুলিশ সপ্তা-২০১৫’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতচক্রের সন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ও চলমান উন্নয়নে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সাথে যথাযথভাবে কর্তব্য পালন করে জনগণের আস্থা অর্জন করতেও পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হবে? এখানে সহিংসতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই। তিনি বলেন, কেবল শান্তি বিদ্যমান থাকলে কোনো দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে। কিন্তু  বর্তমানে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ ও পেট্রোলবোমা হামলায় প্রতিদিন স্বজন হারানোর বেদনা ও আর্তনাদে বাংলার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। এমনকি ছোট শিশুরাও তাদের  হিংস তা  থেকে রেহাই পাচ্ছে না। ধর্মীয় দিবস ও বিশ্ব ইজতেমার সময়ও তাদের হরতাল-অবরোধ চলছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে গত এক বছরে দেশ শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত কোনো কারণ ছাড়াই এবারের নৃশংসতা শুরু করেছে।  তিনি এ দলগুলোকে তাদের হিংস তা বন্ধের আহ্বান জানান।

২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে সহিংসতার ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন ঠেকানোর নামে পুলিশ বাহিনীর ১৭ জন সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ জন সদস্যকে তারা হত্যা করেছিলো। তিনি বলেন, শত বাধার মধ্যে অর্পিত দায়িত্ব দিন-রাত পরিশ্রম করে আপনারা পালন করে যাচ্ছেন। সেজন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পন্ন করতে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করায় পুলিশ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। পুলিশ বাহিনীতে বিভিন্ন সংস্কারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের আধুনিকায়নে আমরা যে সব প্রতিশ্রুতি  দিয়েছিলাম তার অধিকাংশই আমরা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছি। গত ছয় বছরে পুলিশে ৩১ হাজার ৭৪৪টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরো ৫০ হাজার পদ সৃষ্টির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পুলিশে বর্তমানে গ্রেড-১ পদ রয়েছে দুটি। প্রয়োজনে আরো একটি গ্রেড-১ পদ বাড়ানোর আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।  বর্তমানে কনস্টেবল হতে এসআই পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ঝুঁকি ভাতা পর্যায়ক্রমে সকল স্তরের পুলিশ সদস্যদের জন্য বাস্তবায়নেরও আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রবিরোধী অপতত্পরতা রোধ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রযুক্তিনির্ভর ও স্বয়ংসম্পূর্ণ এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। থানা পুলিশি সেবার সবচেয়ে কার্যকর ও দৃশ্যমান ইউনিটে জনবল বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে এ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক ও জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া  প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, মন্ত্রীবর্গ, প্রতিমন্ত্রীবৃন্দ, সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সপ্তা-২০১৫ উপলক্ষে এ বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যদের এক মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ উপলক্ষে তিনি ৮৬ পুলিশ কর্মকর্তা ও কনস্টেবলকে ৪ বিভাগে পুলিশ পদক-২০১৪ প্রদান করেন। এর মধ্যে ১০ জন পুলিশ পদক-বিপিএম (সাহসিকতা) ও ২০ জন বিপিএম (সেবা) পদক এবং ১৬ জন পুলিশ সদস্য রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক পিপিএম (সাহসিকতা) ও ৪০ জনকে পিপিএম (সেবা) পদকে ভূষিত করা হয়। ৩ জনকে দেয়া হয় বিপিএম (সাহসিকতা) (মরণোত্তর) পদক।

Leave a comment