মা ও স্ত্রী-সন্তানসহ কাঁদলেন সকল কাছের মানুষ
স্টাফ রিপোর্টার: আদরের ছোট ছেলে কোকোকে চির বিদায় দিলেন মা। সন্তানের লাশ যে কোন মায়ের কাছে সবচেয়ে বড় কষ্টের। খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম ছিল না। গুলশান কার্যালয়ে কোকোর শ্রশ্রুমন্ডিত অবয়বে পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে শেষ বারের মতো আদর করেন খালেদা জিয়া। অসুস্থ ছেলেকে এমনিতেই অনেকদিন দেখতে পাননি মা। তাছাড়া পরিবারের ছোট ছেলে হিসেবে কোকোকে এমনিতেই একটু বেশী আদর করতেন খালেদা জিয়া। সেই আদরের সন্তানের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন খালেদা জিয়া। লাশ সামনে রেখে এসময় কোকোর রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। প্রায় দেড় ঘন্টা পর পৌনে তিনটায় লাশ নিয়ে বায়তুল মোকাররমের উদ্দেশে রওনা হয় গাড়ির বহর।
এ সময় অশ্রুসজল নয়নে গুলশান কার্যালয়ের মুল ফটকে দাড়িয়ে ছেলেকে চিরবিদায় জানান মা খালেদা জিয়া। অসহায় নি;সঙ্গ মায়ের এই করুণ আর্তি দেখে উপস্থিত নেতাকর্মীরাও আবেগ সংবরণ করতে পারেননি। এরপর কোকোর লাশ জানাজার জন্য জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নেয়া হয়।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে পৌঁছানোর পর হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কার্যালয়ের নিচতলার কনফারেন্স রুমে ছেলের মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা খালেদা জিয়া। সেখানে খালেদা জিয়া ছাড়াও পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। বাইরে অপেক্ষা করছেন শোকার্ত নেতাকর্মীরা।
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছায় কোকোর কফিন। এরপর একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তার কফিন নেয়া হয় গুলশানে। একই ফ্লাইটে কোকোর স্ত্রী, দুই মেয়ে, মামা শামীম এস্কান্দার ঢাকায় আসেন। অ্যাম্বুলেন্সটি গুলশান কার্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢোকানো হয় বেলা পৌনে ২টার দিকে। এরপর নেতাকর্মীরা ধরাধরি করে খয়েরি রঙের কফিনটি নিচ তলার একটি কক্ষে নিয়ে রাখেন। কফিন খোলার পর একটি গিলাফ দিয়ে কোকোর মরদেহ ঢেকে দেয়া হয় এবং তার স্ত্রী শামিলা রহমান সিঁথি দুই মেয়ে জাহিয়া ও জাইসাকে নিয়ে উপরে যান, যেখানে অপেক্ষা করছিলেন পুত্রশোকে কাতর খালেদা জিয়া।
কিছুক্ষণ পর খালেদা জিয়ার দুই ভাই সাঈদ এস্কান্দার ও শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী দুই পাশ থেকে ধরে অশ্রুসিক্ত খালেদা জিয়াকে নিচে নামিয়ে আনেন। খালেদার দুই ছোট ভাইয়ের পরিবারের সদস্য, বড় ছেলে তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবালমান্দ বানু, জোবাইদার বড় বোন শাহিনা খান জামান বিন্দু এবং কোকোর শ্বশুর বাড়ির লোকজন এসময় উপস্থিত ছিলেন। ওই কক্ষে আরবি হরফে লেখা একটি ব্যানার টানানো হয়। পাশের কক্ষে জাতীয়তাবাদী উলামা দলের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সেলিম রেজা, প্রচারনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মাওলানা দ্বীন মোহাম্মদ কাশেমীর নেতৃত্বে সকাল থেকে কোরআন তেলাওয়াত চলছে।
কোকোকে বনানীতে সামরিক কবরস্থানে দাফনের জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে অনুমতিও চাওয়া হলেও সেখানে অনুমতি মেলেনি। কোকোর মরদেহ বনানী সাধারণ কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, তাকে বনানী কবরস্থানে দাফনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।
প্রতি সন্মান জানাতে সোমবার থেকে তিন দিনের শোক পালন করছে বিএনপি। বিএনপির কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার পাশাপাশি কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ পরছেন। এই তিনদিন সারা দেশের মসজিদে মসজিদে কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিল চলছে। এছাড়া মঙ্গলবার সারা দেশে কোকোর গায়েবানা জানাজা পড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
দাফন সম্পন্ন: সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের বনানী কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হলেন কোকো। দুনিয়া ছেড়ে কোকার নতুন ঠিকানা হলো বনানী গোরস্থান ১৮৩৮/১৪৭। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় বনানী গোরস্থানে কোকোর লাশ দাফন করা হয়। এর আগে বাদ আছর বায়তুল মোকাররমে কোকোর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে কোকোর লাশবাহী এম্বুলেন্সটি বনানী গোরস্থানের উদ্দেশ্যে রওনা হলে শত শত মানুষ রাস্তার দু পাশে দাড়িয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে কবর খোঁড়া শুরু হয়। খবর খোড়াসহ দাফনের যাবতীয় দায়িত্ব তত্বাবধান করেন, সাবেক ১৯ নং ওয়ার্ড কমিশনার ও গুলশান থানা বিএনপির নেতা আব্দুল আলীম নকীও জিয়া পরিবারের পক্ষে আতিকুর রহমান রুম্মান। সাবেক কমিশনার নকী জানান, বনানী কবরস্থানের ১৮ নং ব্লকের শুরুর দিকে আরাফাত রহমান কোকোকে দাফনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর আগে এ জায়গায় কোন কবর ছিল না। তিনি জানান, অনেক চেষ্টার পর এ জায়গাটির ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে।
দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের দিকে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) উত্তরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম এনামুল হক উপস্থিত হয়ে বনানী কবরস্থানে কবর খোঁড়ার নির্দেশ দেন। এর আগে দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, একজন সাবেক সেনাপ্রধানের সন্তান হিসেবে অধিকার থাকার পরও শুধু রাজনৈতিক কারণে কোকোর লাশ বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন করতে দেয়া হচ্ছে না। তাই বনানী কবরস্থানে লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার পৌনে ১২টায় কোকোর লাশ দেশে পৌঁছে। লাশ গুলশান কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখান থেকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে নিয়ে যাওয়া হয়। বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো গত শনিবার (২৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মালয়েশিয়ায় হার্ট এ্যাটাকে মারা যান। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে জাতীয় মসজিদ (নাগারা) গত রোববার দুপুরে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।