স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর লাশ আগামীকাল সকালে দেশে আনা হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কোকোর মরদেহ ঢাকায় পৌঁছুবে বলে জানা গেছে। মরদেহ সরাসরি খালেদা জিয়ার গুলশানের কার্যালয়ে নেয়া হবে। সেখানে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানানো হবে। মঙ্গলবার বাদ আসর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কোকোর জানাজা হবে। পরদিন সারাদেশে গায়েবানা জানাজা হবে। কোকোকে বনানী সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। কোকোর লাশ দেশে আনতে শনিবার রাতেই মালয়েশিয়ায় যান খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। তার সাথে যান কোকোর মামাশ্বশুর ও শাহীন নামে পরিবারের আরেক সদস্য।
এদিকে রোববার বাদ জোহর মালয়েশিয়া জাতীয় মসজিদ নেগারায় কোকোর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার প্রবাসী বাঙালি ছাড়াও ঢাকা থেকে যাওয়া বিএনপির নেতারা এতে অংশ নেন। জানাজা শেষে তার মরদেহ কুয়ালালামপুর মালয় ইউনিভার্সিটি সেন্টারের হিমঘরে রাখা হয়েছে। শনিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টায় কুয়ালালামপুরের মনকিয়ারা থেকে পেথালিংজায়া ইউনিভার্সিটি মালয়া হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান কোকো।
এদিকে পূর্ব লন্ডনে রোববার কোকোর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কোকোর বড় ভাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মুশফিকুল ফজল আনসারীসহ স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত দেশব্যাপী তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। শোক দিবস উপলক্ষে দেশের সব দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন।
আরাফাত রহমান কোকোর জানাজা মালয়েশিয়ার জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি জানাজায় অংশ নেন। স্থানীয় সময় ১২টার পর থেকে মানুষের ঢল নামতে থাকে রাজধানী কুয়ালালামপুরের জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। এছাড়া জানাজায় অংশ নিতে ঢাকা থেকে বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আসেন। শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ছিলেন মোসাদ্দেক আলী ফালু, নুরুল ইসলাম মনি, আলী আসগর লবি, মুজিবুর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার। রোববার জানাজা শেষে কোকোর মরদেহ কুয়ালালামপুর মালয় ইউনিভার্সিটি সেন্টারে হিমঘরে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার মালয়েশিয়া সময় সকাল ৯টা ২০ মিনিটে মালয়েশিয়ান বিমানের একটি ফ্লাইটে করে কোকোর মরদেহ দেশে পৌঁছবে বলে স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন। তারা জানান, শনিবার ও রোববার মালয়েশিয়ায় সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় লাশ দেশে পাঠানোর কিছু প্রক্রিয়া অসমাপ্ত রয়েছে। আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি শাখা থেকে ডেথ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা হবে।
এদিকে মালয়েশিয়ার প্রায় সব জেলা থেকে বিএনপির নেতাকর্মী ও মালয়েশিয়ায় বসবাসরত হাজার হাজার প্রবাসী কোকোর জানাজায় অংশ নিতে এবং তাকে এক নজর দেখতে এসেছিলেন মসজিদ নেগারায়। জহুরবারু মালাক্কা পেনাং, কোয়ানতান এর মতো জেলা থেকে প্রবাসীরা আসেন; যেখান থেকে শুধু বিমানেই আসা যায়। কোকোর স্ত্রী শর্মিলী রহমান, বড় মেয়ে জাফিয়া রহমান, ছোট মেয়ে জাহিয়া রহমানও মসজিদ নেগারায় এসেছিলেন। ছোট মেয়ে জাহিয়া বাবার লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তার কান্না দেখে জড়ো হওয়া প্রবাসীরাও কান্না থামাতে পারেননি। সবার চোখে পানি এসে যায়।
২০০৭ সালের জানুয়ারিতে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ওই বছর ৩ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি থেকে কোকোকে আটক করা হয়। ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে স্ত্রী শর্মিলী রহমান সিঁথি, দুই মেয়ে জাফিয়া ও জাহিয়াকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড যান কোকো। এরপর সেখান থেকে মালয়েশিয়ায় চলে যান তিনি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মালয়েশিয়ায় একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন।