আরাফাত রহমান কোকো আর নেই

স্টাফ রিপোর্টার: শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো আর নেই। গতকাল শনিবার মালয়েশিয়ার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায়) তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি…রাজিউন)। দু মেয়ের জনক কোকোর বয়স হয়েছিলো ৪৫ বছর। তার মরদেহ মালইয়া ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আজ মরহুমের বড় ভাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান মালয়েশিয়ায় গিয়ে লাশ দাফনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন।

গতকাল বিকেলে কোকোর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সংবাদমাধ্যমকে জানান, শনিবার হৃদরোগে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে নেয়ার পথে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যু হয়। আরাফাতের দাফনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আরাফাত রহমান কোকোর বিদেহী আত্মার মাগফিরাতের জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করেন তিনি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইঙের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার সাংবাদিকদের জানান, আরাফাত রহমান কোকোর মরদেহ মালইয়া ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে। রোববার জোহরের নামাজের পর কুয়ালালামপুরের মসজিদে নাগারায় আরাফাতের জানাজা হবে। সেখানে যাবেন কোকোর ভাই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানে গিয়ে দাফনের বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। এদিকে, কোকোর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। মৃত্যুর খবর আসার পর গুলশান কাঁচাবাজার সংলগ্ন মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে কোরআন খতম দেয়ার জন্য চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া খালেদা জিয়ার কয়েকজন নিকটাত্মীয়ও ছুটে যান কার্যালয়ে। দুপুর আড়াইটার দিকে ছোট দুই ভাই প্রয়াত সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রী নাসরীন সাঈদ এবং শামীম এস্কান্দারের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা কক্ষে প্রবেশ করে হাউমাউ করে কেঁদে কোকোর মৃত্যু সংবাদটি জানান খালেদা জিয়াকে। এরপরই বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে গুলশান কার্যালয়ে। মৃত্যু সংবাদের পর গুলশানের কার্যালয়ে ছুটে যান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম, গিয়াস কাদের চৌধুরী, এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও তার স্ত্রী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সদরুল আমিন, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসসহ বেগম জিয়ার দু ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া আরাফাত রহমান কোকোর শাশুড়িসহ তাদের পরিবারের সদস্যরা গুলশানের কার্যালয়ে আসেন।

সন্ধ্যায় বাদ মাগরিব গুলশানের কার্যালয়ের নিচতলায় কোরআন খতমের পর বিশেষ মোনাজাত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন হাফেজ কারি বেলালী। বিশেষ মোনাজাত শেষে সমবেতদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ছেলের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যেতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আরাফাত রহমান কোকোর জন্য নামাজান্তে আপনারা যে যেখানে অবস্থান করছেন, সেখান থেকে তার আত্মার জন্য দোয়া করবেন। ম্যাডাম খালেদা জিয়া আপনাদের সবার কাছে এ অনুরোধ রেখেছেন।

আরাফাত রহমান কোকোর জন্য যারা সমবেদনা ও দোয়া করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন বলে জানান রফিকুল ইসলাম মিয়া। ১৯৭০ সালে কুমিল্লা সেনানিবাসে আরাফাত রহমান কোকোর জন্ম। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গ্রেপ্তার হন কোকো। ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরদিন স্ত্রী শর্মিলী রহমান এবং দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যান। পরে অর্থ পাচার মামলায় তার সাজা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে থাইল্যান্ড থেকে সপরিবারে মালয়েশিয়ায় যান কোকো।

এদিকে ২০১৩ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ব্যাংককে ছোট ছেলেকে দেখতে যান। সেটাই ছিলো মায়ের সাথে কোকোর শেষ মুখোমুখি। ওই সময় মায়ের পরশ নিতে হোটেলেও পরিবার নিয়ে মায়ের সঙ্গে ছিলেন কোকো। এদিকে আরাফাত রহমানের মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে শোক প্রকাশ করা হয়েছে। পৃথক শোকবার্তায় ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, তারেক রহমান গবেষণা কেন্দ্র, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম এবং চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা জেডএ খান শোক প্রকাশ করেছেন।

জামায়াতের শোক: ২০ দলীয় জোটনেত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর আকস্মিক ইন্তেকালে গভীর শোক জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শনিবার সন্ধ্যায় এক শোকবার্তায় দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ এবং ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আরাফাত রহমান কোকোর আকস্মিক ইন্তেকালে আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। মরহুমের জীবনের সব নেক আমল কবুল করে আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুন। আমরা শোকাহত নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তার পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাচ্ছি। তাকে এই শোক সহ্য করার তওফিক দানের জন্য আমরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করছি।

শোক প্রকাশ: শহীদ প্রেসিন্ডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ট পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর অকাল মূত্যুতে দামুড়হুদা থানা বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হাসান তনু গভীর শোক প্রকাশ করেছে। তারা কোকোর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

Leave a comment