স্টাফ রিপোর্টার: আজ ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিধ্বস্ত দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়ার প্রশ্নটি যখন কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি, তখন পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুযন্ত্রণা শেষে ১৯৭২ সালের এ দিনে লন্ডন-দিল্লি হয়ে মুক্ত স্বাধীন স্বদেশের মাটিতে ফিরে আসেন তিনি। এক সাগর রক্ত দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে বাংলাদেশের সৃষ্টি, সেই দেশে বঙ্গবন্ধুর ফেরার দিনটি ছিলো অনন্য এক দিন। সেদিন নতুন এদেশের সব রাস্তা গিয়ে মিলেছিলো তৎকালীন তেজগাঁওয়ের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। ফুলে ফুলে ছেয়ে গিয়েছিলো তার আগমনের পথ। বিমানবন্দর থেকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর পর্যন্ত ছিলো মানুষের ঢল। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, তুমি কে আমি কে বাঙালি বাঙালি, পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা- এসব ধ্বনিতে সেদিন আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়েছিলো। যে দেশ, যে স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সেই মাটিতে পা দিয়েই আবেগে কেঁদে ফেলেন তিনি। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানাতে যারা গিয়েছিলেন, অস্থায়ী সরকারের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা তারাও অশ্রুসজল নয়নে বরণ করেন ইতিহাসের এ বরপুত্রকে।
সেই থেকে প্রতি বছর নানা আয়োজনে পালন করা হয় এ দিনটি। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস এখন ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা এখন তার খুনিদের পদচারণা থেকে মুক্ত। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালীন যারা এ দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাক সেনাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিলো, সেই সব মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে আরেক যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানের ফাঁসি। বরাবরের মতো এবারও আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন স্মরণীয় এ দিবসটি পালনের জন্য নানা আয়োজন করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
স্বদেশে আগমনের এ দৃশ্যটি প্যাট্রিয়ট কবিতার সেই নান্দনিক দৃশ্যের কথাই মনে করিয়ে দিয়েছিল বিশ্ববাসীকে। সেদিন বিশেষ বিমানে ঢাকার পথে বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন ভারতীয় কূটনীতিক বেদ মারওয়া। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর মনের অবস্থার কথা। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন কারাবন্দি থাকা সত্ত্বেও শেখ মুজিবকে বেশ চাঙ্গা দেখাচ্ছিলো। সবকিছুতেই তার মধ্যে প্রচণ্ড উৎসাহ কাজ করছিলো। আর ঢাকা বিমানবন্দরে তখন অপেক্ষার প্রহর কাটছিলো না এদেশের মানুষের। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসা মুক্ত স্বাধীন বাংলার মানুষ তাদের মধ্যে প্রিয় নেতাকে পেয়ে আবেগে ও আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে টগবগিয়ে ফুটতে থাকে। খুশির বন্যা বয়ে যায় সারাদেশে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদ অতিক্রান্ত করছে। তৃতীয় মেয়াদের সরকারেরও এক বছর পূর্ণ হয়েছে। বিচারহীনতার কারণে জাতির ললাটে যে কলঙ্কতিলক ছিলো তা মুছে গেছে বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং একজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকরে।
দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল, সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এ দিবসের ঐতিহাসিক তাৎপর্য তুলে ধরে জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ সংবাদ পরিবেশন ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বেসরকারি এফএম রেডিও ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো আয়োজন করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার। আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং ১২ জানুয়ারি সোমবার বেলা ২টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।