বিয়ে বহির্ভুত দৈহিক সম্পর্ক সমাজ স্বীকৃত নয় যেমন তেমনই আইনেও সমর্থন করে না। অনৈতিক এ সম্পর্কের প্রবণতা সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে? নাকি পূর্বেও ছিলো তখন এখনকার মতো এতোটা প্রকাশ পায়নি? মাঝে মাঝেই এ ধরনের সংবাদ পত্রপত্রিকার পাতায় ঠাঁই পাচ্ছে। গতকালও দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকার শেষপাতায় মেহেরপুর গাংনী এলাকার এক স্কুলশিক্ষককে নিয়ে এ ধরনের খবর পত্রস্থ হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যদিও ওই ধর্মীয় শিক্ষক অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনিও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। গ্রামে দফায় দফায় সালিস বসছে। কিছু মহলে হাস্যরসেরও খোরাক হয়েছেন তিনি।
অবশ্যই একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যখন অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ উত্থাপন হয় তখন তার বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় রাখা না রাখার বিষয়টি উঠে আসে। কেন না, শিক্ষকমণ্ডলি সমাজের আদর্শ। একজন শিক্ষক হয়েও তার নীতি নৈতিকতার স্খলন সমাজের বিবেকবানদের বিব্রতই করে না, সভ্যতাকেও কলঙ্কিত করে। যদিও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দীর্ঘদিন ধরে যোগ্যতার মাপকাঠি দক্ষতার বদলে নানাবিধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তদবিরসহ উপঢৌকন দিনদিন এতোটাই ব্যাপকতা পেয়েছে যে, তাতে আর রাখঢাকও থাকছে না। এ কারণে শিক্ষার মান উন্নয়ন হুমকির মধ্যেই পড়ছে না, শিক্ষকতা পেশায় এসেও নিজের গুরুত্বোনুধাবনে কেউ কেউ খেয় হারাচ্ছেন। তা না হলে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী স্বামী পরিত্যক্তার সাথে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ কেন? অবশ্য অভিযোগ উত্থাপন হলেই যে, তাকে দোষী বলে ধরে নেয়া যায় না। উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ পরীক্ষায় আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগে দোষী ভাবারও কারণ নেই। কেন না, সমাজে দীর্ঘদিন ধরেই মতলববাজদের পদচারণা রয়েছে। উদ্দেশ্য প্রণোদিত বানোয়াট অভিযোগ তুলে মজা দেখার লোক কিছু হলেও আছে। তাই বলে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর অন্তঃসত্ত্বার আনীত অভিযোগকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। যদিও অনৈতিক সম্পর্কে উভয়েরই শারীরিক চাহিদা তথা সহজাত প্রবৃত্তির বিষয়টি সুপ্তভাবে হলেও লুকিয়ে থাকে। বিয়ে বহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্ক সমাজের অসংখ্য সমস্যার একটি।
সম্প্রতি বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে দেহভোগের অভিযোগের মাত্রা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষয়টি নানাজন নানাভাবে নিলেও সত্য গোপনে সমাধান মেলে না। যেহেতু ঘটনাবলী সমাজেরই, সেহেতু আড়ালের বদলে সমস্যার গভীরে প্রবেশ করে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রবণতা হ্রাসে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। সমাজে যাদেরকে আদর্শ হিসেবে দেখে সমাজের মানুষ তাদের নীতি নৈতিকতা অটুটুই কাম্য। অভিযোগের সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত প্রয়োজন। দোষী প্রমাণিত হলে উপযুক্ত শাস্তি যেমনন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।