কোলকাতা-ঢাকা মৈত্রী ট্রেন সপ্তায় ছয়দিন চলাচল শুরু
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার দর্শনা হয়ে ঢাকা-কোলকাতা পথে মৈত্রী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। গত রোববার কোলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশে অতিরিক্ত ট্রেনটি চলাচল শুরু করেছে। এ নিয়ে সপ্তায় বৃহস্পতিবার বাদে ছয় দিনই চলাচল করবে। তিনদিন ঢাকা থেকে কোলকাতা ও তিনদিন কোলকাতা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ট্রেন চলাচল করবে। এ ট্রেনটি গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা থেকে কোলকাতার উদ্দেশে ফিরে গেছে। ফিরতি ট্রেনে মাত্র রিনা আক্তার নামে এক নারী যাত্রী যান। যা বিশ্বরেকর্ড। রিনা ঢাকা ইডেন কলেজের ছাত্রী।
এদিকে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ট্রেন চালুর কারণে আজ কোলকাতা থেকে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী আসেননি। গত রোববার বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে ট্রেনটি দর্শনায় পৌঁছায় ১২টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় এবং ৪৫৯ সিটের বিপরীতে মাত্র ১৬ জন যাত্রী এসেছেন। যাদের সকলেই বাংলাদেশি যাত্রী। অপরদিকে গতাকল ফিরতি সময় একজন যাত্রী নিয়ে ভারতের উদ্দেশে ট্রেনটি রওনা দেয়। ফেরার সময় সোমবার বেলা ১টা ৫০ ট্রেনটি দর্শনায় পৌঁছায় এবং ২টা ৫০ মিনিটে দর্শনা ত্যাগ করে ভারতের উদ্দেশে রওনা দেয়। নতুন ট্রেন চলাচল শুরু করায় যাত্রীরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। যাত্রীরা জানান, এ ট্রেনটিকে যাত্রীবান্ধব করতে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন ছাড়াও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ থেকে টিকেট সংগ্রহের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং দর্শনা স্টেশনে রেস্টুরেন্ট এবং প্রয়োজনীয় ট্রলির ব্যবস্থা করা। সেই সাথে দর্শনায় ও ঈশ্বরদীতে পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যাত্রী ওঠানামার সুযোগ সৃষ্টি করা।
দর্শনা স্টেশন মাস্টার মীর মো. লিয়াকত আলী জানান, মৈত্রী ট্রেনের জনপ্রিয়তার কারণেই নতুন এ সংযোজন। প্রচার-প্রচারণার অভাবে যাত্রী কম ভ্রমণ করলেও দ্রুততম সময়ে যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যাবে। ১৫ দিনের মধ্যে ১৫০টি ট্রলি আনা হবে।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, ৫ জানুয়ারির প্রভাব পড়েছে ঢাকা-কোলকাতা চলাচলকারী মৈত্রী ট্রেনে। গতকাল সোমবার মাত্র একজন যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে কোলকাতায় ছেড়ে গেলো যাত্রীবাহী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি। গতকাল সোমবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি দর্শনা স্টেশন ছেড়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেছে। ট্রেনের একমাত্র যাত্রী কলেজ ছাত্রী। যাত্রী রীনা আক্তার এ বছর ঢাকা ইডেন কলেজে মাস্টার্স ভর্তি হবেন বলে জানিয়েছেন।
দর্শনা স্টেশনে পৌঁছে রীনা আক্তার জানিয়েছেন, গত রোববার ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিট করতে গিয়ে দেখতে পান তিনি ও শাহানা আমিন নামের আরো একজন মহিলা টিকিট কেটেছেন। কিন্তু ট্রেনে উঠে শাহানাকে দেখতে পাননি রীনা। রীনা অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, ঢাকা-কোলকাতাগামী যাত্রীবাহী ট্রেন মৈত্রী এক্সপ্রেসে একমাত্র যাত্রী হওয়ায় নিজেকে একা একা লাগলেও ভীষণ ভালো লেগেছে। রীনাকে ট্রেন স্টাফরা ভীষণ খাতির করেছে। শোভনে টিকিট কেটেও এসি কেবিনে বসে ভারতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে রীনা। তিনি পাঁচদিনের সফরে এ প্রথম ভারতে গেলেন। মৈত্রী ট্রেনের ইন্ডিয়ান গার্ড গৌতম চক্রবর্তী জানান, যাত্রী একজন হলেও তার সবধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ৫ জানুয়ারি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ার কারণে মৈত্রী ট্রেনে কোনো যাত্রী হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। তবে দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের মাস্টার মীর লিয়াকত আলী বলেছেন, বর্তমানে মৈত্রী ট্রেনের প্রতিযাত্রায় গড়ে ৪শ জন যাত্রী যাতায়াত করছে। তবে স্বল্প সময়ে মৈত্রীর আরো দুটি ট্রিপ বৃদ্ধি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা-কোলকাতার মধ্যে একমাত্র যাত্রীবাহী মৈত্রী ট্রেনের যাত্রা শুরু হয়। এ ট্রেন যাত্রার প্রায় ৭ বছর। ৭ বছরের রেকর্ড ভাঙলো গতকাল।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশের মৈত্রী এক্সপ্রেসের ৱ্যাক কম্পোজিশনে ৭টি বগিতে ৪১৮টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে এসি সিট ৩৬টি, এসি চেয়ার ৮০টি ও শোভন চেয়ার রয়েছে ৩০২টি। অন্যদিকে ভারতীয় কম্পোজিশনের ৭টি বগিতে মোট আসন সংখ্যা ৪৫৯টি। এর মধ্যে এসি সিট ২৭, এসি চেয়ার ১৪৬ এবং শোভন চেয়ার রয়েছে ২৮৬টি। বর্তমানে মৈত্রী ট্রেনের টিকিটের মূল্য রয়েছে এসি সিট ২০ ডলার সাথে শতকরা ১৫ ভাগ ভ্যাট। এসি চেয়ার ১২ ডলার সাথে ১৫ ভাগ ভ্যাট এবং শোভন চেয়ার ৮ ডলার সাথে কোনো ভ্যাট নেই।