স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির অন্যতম যুগ্মসম্পাদক দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা রুহুল কবীর রিজভীকে মধ্যরাতে পুলিশ আটক করেছে। পুলিশ তাকে আটক করে হাসপাতালে নিয়েছে বলে দাবি করলেও দলীয় সূত্র বলেছে, সরকারের নির্দেশে তাকে আটক করা হয়েছে। অপরদিকে গুলশানস্থ কার্যালয় থেকে ফেরার পথে অবরুদ্ধ হয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এদিকে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে পুলিশ আধা ঘণ্টা তল্লাশি শেষে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীকে ৫ জানুয়ারি পূর্ব ঘোষিত ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালনের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে গতরাত ১টায় তার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানান। শিমুল বিশ্বাস বলেন, প্রতিদিনের মতো শনিবারও বিএনপি চেয়ারপারসন তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দাপ্তরিক ও সাংগঠনিক কাজ তদারকির জন্য গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসেন। এরই মধ্যে খবর আসে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলে যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গুরুতর অসুস্থ। এ খবর পাওয়ার পর খালেদা জিয়া নয়াপল্টন কার্যালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে তার গুলশান কার্যালয় চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে পুলিশ। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে খালেদা জিয়া যখন তার বাসায় যাওয়ার জন্য রওয়ানা হন, ঠিক সেই সময় পুলিশের একটি গাড়ি গুলশান কার্যালয়ের মূল ফটকে ব্যারিকেড তৈরি করে। খালেদা জিয়া দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে উঠে বসে থাকলেও তাকে বের হতে দেয়া হয়নি। অবশেষ তিনি ফের অফিসে ফিরে যান। শিমুল বিশ্বাস বলেন, আমরা ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সাথে কথা বলেছি। তিনি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন ২০ দলীয় জোট ঘোষিত পূর্ব কর্মসূচি গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালন করার জন্য। খালেদা কার্যালয় থেকে বের হবেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি বের হতে চেয়েও বের হতে পারেননি। তার বাসা ও অফিস ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। আপাতত এই সংবাদটুকুই আপনারা জনগণের কাছে পৌঁছান। রুহুল কবির রিজভী সারা বছরই কার্যালয়ে থাকেন, হঠাত আজ কেন অসুস্থ হলেন, আর খালেদা জিয়াই বা কেন সেখানে যাওয়ার জন্য রওনা দিলেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর আগেও তিনি অসুস্থ রিজভীকে দেখতে নয়াপল্টনে গিয়েছেন। আজকের ঘটনাটি কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।
রিজভীকে ‘তুলে নিয়ে গেছে’পুলিশ: বিএনপির নয়া পল্টনের কার্যালয়ে থেকে দলের যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে তুলে নিয়ে গেছে গোয়েন্দা পুলিশ। গতরাত ১২টার দিকে কার্যালয়ের তিনতলা থেকে রিজভীকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে। আরও জানা গেছে, পুলিশ সদস্যরা কার্যালয়ে ঢুকেই রিজভীকে উদ্দেশ করে বলেন- স্যার আপনি অসুস্থ। এখানে আপনার চিকিৎসা হবে না। আপনি যেখানে ভালো মনে করবেন সেখানেই আমরা আপনাকে নিয়ে যাব। এ সময়ে রিজভী গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চান- আপনারা আমাকে কোথায় নিয়ে যেতে চান। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তখন বলেন- আপনি চাইলে আমরা স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাব।’ এরপরই বিছানা থেকে হাতে স্যালাইন লাগানো অবস্থায় রিজভীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পুলিশ সদস্যরা নিয়ে যান বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে পল্টন থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা মুনিরুল ইসলাম বলেন, রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেফতার করা হয়নি, চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই তথ্য দিয়েছেন। এর আগে অসুস্থবোধ করলে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এএসএমএ রায়হান কার্যালয়ে গিয়ে রিজভীকে চিকিৎসা দেন। চিকিৎসক চলে যাওয়ার পরপরই গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কার্যালয়ে ঢোকেন। অধ্যাপক রায়হান সাংবাদিকদের বলেন, বমি হওয়ায় রোগীকে স্যালাইন দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখতে বলেছি। নয়া পল্টনের কার্যালয় গত কয়েকদিন ধরে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন রিজভী। এই কার্যালয়ে রিজভী ছাড়া নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদসহ কয়েকজন অফিস কর্মীও রয়েছেন।
গত ২৭ ডিসেম্বর ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতালে রাজধানীর তোপখানা রোডে একটি বাস পোড়ানোর ঘটনায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, রিজভীসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় গাড়ি পোড়ানোর মামলা দায়ের করে পুলিশ। এরপর থেকে রিজভী নয়া পল্টনের কার্যালয়েই থাকছেন।
বিএনপি কার্যালয়ে তালা: প্রায় আধা ঘণ্টা তল্লাশি শেষে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা মেরে দিয়েছে পুলিশ। গতরাত সোয়া ১২টার দিকে কার্যালয়ে ঢুকে পুলিশ তল্লাশি শুরু করে বলে জানা যায়। রাত পৌনে ১টার দিকে কার্যালয়ে থাকা আটজনকে বের করে তালা দিয়ে পুলিশ চাবি নিয়ে গেছে বলেও জানান তিনি। এর আগে রাত ১২টার দিকে কার্যালয়ের তৃতীয় তলা থেকে দলের যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা। তবে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে পল্টন থানা থেকে জানানো হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তাও একই কথা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, চিকিৎসার জন্য অসুস্থ রিজভীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।