পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) : সকলকে শুভেচ্ছা

চান্দ্রমাস রবিউল আউয়ালের ১২ তারিখ সুবেহ সাদিকের সময় মা আমিনার কোল আলোকিত করে আগমন করেন মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.)। ঈদ অর্থ আনন্দ, আর ঈদে মিলাদুন্নবী অর্থ নবী (স.) এর জন্ম বা জন্মোত্সব। নবী করীমের (স.) ওফাত দিবসও এই ১২ রবিউল আউয়াল। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) আজ। এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন আল্লাহর রসূল হযরত মুহাম্মদ (স.)।

সাধক শেখসাদী লিখেছেন, ‘বালাগাল উলা বিকামালিহি। কাশাফাদ্দোজাবি জামালিহি। হাসুনাত জামিউ খিসালিহি। ছাল্লু আলাইহি অ-আলিহি’ অর্থাৎ তিনি (মুহাম্মদ স.) চরিত্রের পরিপূর্ণতায় সম্মানের উচ্চাসনে আসীন হয়েছেন। তাঁর সৌন্দর্যের আলো চারদিকে বিকশিত হয়ে পড়েছে। তাই তাঁর সমস্ত কর্মকাণ্ডই প্রশংসনীয়। অতএব সকলেই তাঁর ওপর দরূদ পাঠ করুন এবং তাঁর পরিবারবর্গের জন্য মহামহিম আল্লাহ পাকের দরবারে মাগফেরাত কামনা করুন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, অ-মা আরসালনাকা ইল্লা রহমাতুল্লিল আলামিন অর্থাৎ আপনাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র বিশ্বের রহমত স্বরূপ। বাস্তবিকপক্ষেই দার্শনিক, বাগ্মী, ধর্ম প্রচারক, আইন প্রণেতা, যোদ্ধা, মানবিক রীতি-নীতির উচ্চতম আদর্শের ধারক যিনি, তিনি মুহাম্মদ (স)। তিনি বিনম্র তবু নির্ভিক, শিষ্ট তবু সাহসী, সন্তান বত্সল এবং বিজ্ঞজন পরিবৃত। তিনি সম্মানিত, মানব সমাজে তিনি উন্নত, সর্বদাই সত্যবাদী, প্রেমময় স্বামী, বন্ধুত্বে অবিচল এবং অন্যের প্রতি ভ্রাতৃসুলভ, দয়ার্দ্র, অতিথিপরায়ণ, উদার এবং নিজের জন্য সর্বদাই মিতব্যয়ী। কঠিন তিনি মিথ্যা শপথের বিরুদ্ধে, ব্যাভিচারীর বিরুদ্ধে। খুনি, কুত্সাকারী, অর্থলোভী, মিথ্যা সাক্ষ্যদাতাদের তিনি প্রতিপক্ষ। ধৈর্যে, বদান্যতায়, দয়ায়, পরোপকারে, কৃতজ্ঞতায়, পিতা-মাতা ও গুরুজনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে তিনি সর্বদা অনুসরণীয়। মানবিক প্রবৃত্তির সবকিছু মুহাম্মদ (স.) এর মধ্যে ছিলো। যখন তাঁর বয়স ৪০ হলো তখন তিনি প্রত্যাদেশের মাধ্যমে নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়ে  হেরা পর্বতগুহা হতে ফিরে এসে সত্য বাণীর ঘোষণা করেন। মক্কার ১৩ বছরের নানাভাবে অত্যাচারে নির্যাতনে জর্জরিত হয়ে তিনি হিজরত করে মদিনায় চলে যান। মদিনায় তিনি একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন, যাকে মদীনার সনদ বলা হয়। মদিনার মুসলমান, ইহুদি, খ্রিস্টান পৌত্তলিক সকলেই সেখানে স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে থাকেন। সমাজে প্রবাহিত হলো শান্তির ফল্গুধারা। অবশেষে মক্কা বিজয় হলো। রসূল (স) ‘যাআল হাক্কু অযাহাকাল বাতিলু ইন্নাল বাতিলা কানা জাহুকা’ বলতে বলতে আল্লাহর ঘর কাবায় প্রবেশ করেন, অতঃপর বিদায় হজ্বের ভাষণে ১ লাখ ১৭ হাজার সাহাবীর সামনে বলেন, আমি কী আল্লাহর বাণী পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দিয়েছি? সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন।

পবিত্র কুরআনের সর্বশেষ আয়াত অবতীর্ণ হয় যার অর্থ হলো আজকের দিনে আমি ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। মিলাদুন্নবীর (স) পবিত্র দিনে এই মহামানবের প্রতি জানাই সালাম ও দরূদ। কামনা করি বিশ্ব মানবের শান্তি ও কল্যাণ। সকলকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর (স.) শুভেচ্ছা। আজকের এই দিনে মুসলিম জাহানে বয়ে আনুক সমৃদ্ধতা।

Leave a comment