সীমান্ত হত্যা বন্ধে প্রতিশ্রুতির প্রত্যাশিত বাস্তবায়ন কাম্য

 

সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনাসহ যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে যৌথ দলিল স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের ইতি টানা হয়। সমাপনী বক্তব্য রাখেন পড়শি দু’দেশের দু’সংস্থার মহাপরিচালক। গত শুক্রবার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি-বিএসএফের ৪০তম এ সম্মেলন শুরু হয়।

যৌথ দলিলের উদ্ধৃতি দিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা, গুলি করা, আহত করার বিষয়ে বিএসএফের কাছে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। আলোচনা শেষে সীমান্তে হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার বিষয়ে দু’পক্ষ একমত হয়েছে। সীমান্তের যেসব স্থানে বেশি অপরাধ ও হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয় সেসব স্থানে যৌথ টহল ও তল্লাশির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘আমরা ২০১০ সালের সীমান্ত সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সীমান্তে আত্মঘাতী নয়; এমন অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিই। এতে প্রাণহানি কমেছে। অপরদিকে আন্তঃসীমান্ত অপরাধীদের হাতে বিএসএফ সদস্যরা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেড়েছে। তার দাবি, বিএসএফ সদস্যদের গুলি করা না হলে কিংবা আক্রান্ত না হলে তারা গুলি ছোড়েন না।’ বাংলাদেশের কোনো নাগরিক বিএসএফ সদস্যদেরকে গুলি করে আহত করার প্রমাণ তার কাছে আছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটার প্রমাণ নেই। তবে কিছু কিছু মেডিকেল রিপোর্টে গুলি ও হামলার কথা উল্লেখ রয়েছে’। এদিকে এ সম্মেলন শুরুর একদিন আগেই বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের হরিহর সীমান্তে এক কৃষককে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ। গুলিতে আহত হন আরো দুজন। এ হত্যাকাণ্ডের আড়ালে চোরাচালান ছিলো না। বিএসএফ’র ওপর হামলাও হয়নি। তারপরও গুলি কেন? কেন হত্যা? এ প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্রতর হয়েছে। স্থানীয়রা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, সীমান্তবর্তী জমিতে কৃষি কাজের জন্য গেলে এক যুবককে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ। যুবক ভাতিজাকে ধরে নিয়ে বিএসএফ নির্যাতন করছে দেখে কৃষক চাচা ছুটে যান। নির্যাতনের প্রতিবাদ জানান। চাচা যুক্তি দিয়েই তার ভাতিজাকে ছাড়িয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশও করেন। পেছন থেকে গুলি ছোড়ে বিএসএফ। প্রাণ হারান নিরস্ত্র সীমান্তের একজন সাধারণ কৃষক। এর বিচার হওয়া উচিত নয় কি? অবশ্যই বিচার হওয়া দরকার। কিন্তু তা কি হবে? না কি গরু বা মাদক পাচার করে আনতে গিয়ে বিএসএফ’র হাতে খুন হওয়ার মতো অসংখ্য হত্যাকাণ্ডের সাথে কৃষক হত্যার বিষয়টিও গুলিয়ে যাবে?

নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না, সীমান্তে বিএসএফ’র গুলি, গুলিতে বাংলাদেশের নিরীহ নাগরিকের প্রাণহানি বন্ধে পূর্বেও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়েছে। প্রতিশ্রুতিও মিলেছে। বাস্তবে তার প্রত্যাশিত প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়নি। এবার দু দেশের সীমান্তরক্ষীদের সম্মেলনে যে দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছে, সে বিষয়ে যতোটুকু জানা গেছে, তা সীমান্তে হত্যা বন্ধে ইতিবাচকই বলে মনে হয়েছে। দরকার এর যথাযথ বাস্তবায়ন। সীমান্তে হত্যা বন্ধে সকল হত্যার বিচার হওয়া প্রয়োজন।

Leave a comment