স্টাফ রিপোর্টার: ঘড়ির কাঁটায় তখন পৌনে ৩টা বাজে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হলো আর কোনো আশার আলো নেই। পাইপের ভেতর কোনো শিশুর অস্তিত্ব নেই। তাই উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হল। এ ঘোষণার ১৩ মিনিটের মাথায় সরকারি সব সংস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থানীয়রা উদ্ধার করলেন শিশু জিহাদকে। তবে তাদের আক্ষেপ জীবিত উদ্ধার হলো না জিহাদ। সুযোগটা আরও আগে পাওয়া গেলে হয়তো তাদের এ আক্ষেপটাও থাকতো না। আনন্দের মাঝেই বেজে উঠলো বেদনার সুর। সান্ত্বনা এই টুকু যে, অন্তত জিহাদের লাশটা ফেরত পাওয়া গেলো। সবার দৃষ্টি তখন জিহাদ উদ্ধারের নায়কদের দিকে। সরকারি সব সংস্থা যখন ব্যর্থ, তখন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী কয়েকজন যুবকের এমন উদ্ধার অভিযান সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। বীরোচিত এ অভিযানে তারা ব্যবহার করেছেন সিম্পল প্রযুক্তি। তিনটি লোহার রড, একটি সিসি ক্যামেরা, একটি টর্চ লাইট- এ তিনটি সরঞ্জামের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় একটি দেশীয় যন্ত্র। যার নাম দেয়া হয় কামরী বা ক্যাচার। এটি তৈরি করতে মাত্র ছয় থেকে সাতশ টাকার রড লেগেছে। শনিবার বেলা ২টার দিকে এটি তৈরি করা হয়। এরপর এর সাথে বিদ্যুত সংযোগ করে আড়াইটার দিকে মোটা দড়ি দিয়ে কামরীর ওপরের অংশে বেঁধে পাইপের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হয়। প্রায় আধঘণ্টায় অর্থাৎ ২টা ৫৮ মিনিটে ওই কামরীর মাধ্যমেই শিশু জিহাদকে উদ্ধার করা হয়। এতে সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন সুজন দাশ, রাহুল, আবদুল মজিদ, শফিকুল ইসলাম ফারুক, শাহ মো. আবদুল্লাহ আল মুন, আবু বকর সিদ্দিক, মুরাদ, রহমত উল্লাহ, আলমগীর ও আনোয়ার। পাইপের ভেতর থেকে জিহাদকে বের করার সাথে সাথে উপস্থিত জনগণ আল্লাহ আকবর বলে চিৎকার দিয়ে ওঠেন। উদ্ধারের সময় সবার মধ্যে আনন্দ-উল্লাস লক্ষ্য করা যায়। কিন্ত মুহূর্তে তা বিষাদে পরিণত হয়। স্বেচ্ছাসেবীরা জিহাদ উদ্ধারের নায়ক স্লোগানে উল্লাস করতে থাকেন সাধারণ মানুষ। একই সাথে ফায়ার সার্ভিসসহ উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া সরকারি সব সংস্থাকে ভুয়া ভুয়া বলে স্লোগান দেয় তারা। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীসহ সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের বিচারের দাবিও জানান তারা।