জাতীয় প্রেসক্লাবে কাফনের কাপড় পরে আলমডাঙ্গার একটি পরিবার : চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে আওয়ামী লীগ নেতার সংবাদ সম্মেলন
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার পল্লি পাইকপাড়ার ভূমিহীন আব্দুর রাজ্জাক তার লিজ নেয়া জমির দখল ফেরত পাওয়ার দাবি নিয়ে রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কাফনের কাপড় পরে সপরিবারে অবস্থান নিয়েছেন। এদিকে অভিযুক্ত একই গ্রামের ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাসুদউজ্জামান লিটু বিশ্বাস চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আব্দুর রাজ্জাক বানোয়াট অভিযোগ তুলে জাতীয় প্রেসক্লাবে অবস্থান নিয়ে মিথ্যা কথা বলছে বলে দাবি জানিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে মাসুদউজ্জামান লিটু বিশ্বাস বলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের ভূমিহীন আব্দুর রাজ্জাক ১ নং খতিয়ানের দাগে আট শতক সরকারি জমি বন্দোবস্ত পান। ২০১০ সালের ১০ এপ্রিল জমিটি তিন লাখ টাকার বিনিময়ে তার কাছে ১৫০ টাকার ননজুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে বিক্রয় চুক্তি বায়নানামা করেন। এরপর ওই জমিতে পাকা স্থাপনা তৈরি করলে রাজ্জাক জমি বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেন। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। তদন্ত হয়। লিজ বাতিলের সুপারিশ করে তদন্ত টিম। জিপিও অভিন্ন অভিমত ব্যক্ত করে লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে জানান।
তিনি বলেন, শর্তভঙ্গ করায় আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন সম্প্রতি ওই জমির বন্দোবস্ত বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই এক পর্যায়ে রাজ্জাক সপরিবারে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত কয়েকদিন ধরে আমরণ অনশনের নামে প্রতারণা করছেন। পক্ষান্তরে আব্দুর রাজ্জাক জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কাফনের কাপড় পরে সপরিবারে অবস্থান নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, দু মেয়ে নিয়ে আমি কই যাবো, আমাদের তো থাকার বসতবাড়ির জায়াগা নেই। তাই এখানে পড়ে আছি। থাকার জায়গাটা দখল করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের থাকার জমিটা ফিরিয়ে দিক, নয়ত আমাদের মেরে ফেলুক। জায়গা ফেরত না পেলে আমরা কোথাও যাবো না। এই জাতীয় প্রেসক্লাবেই সপরিবারে জীবন দেবো।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত সোমবার থেকে মাহফুজা তার স্বামী আবদুর রাজ্জাক, দু মেয়ে বৃষ্টি খাতুন ও মিষ্টি খাতুন (সপ্তম ও চতুর্থ শ্রেণি) এবং শ্বশুর মো. মুক্তার আলীকে নিয়ে বসতবাড়ির জমি ফিরে পাওয়ার দাবিতে কাফনের কাপড় পরে অনশন করছেন। আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা মৌজার ৯৭ পাইকপাড়ার ১ নং আরএস খতিয়ানের ২ নং দাগের মোট আট শতক খাসজমি। জমাজমি বন্দোবস্ত নীতিমালা মেনে আলমডাঙ্গার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে আবেদন করলে তদন্ত সাপেক্ষে আমি ও আমার স্ত্রীর নামে বন্দোবন্ত অনুমোদন সাপেক্ষে রেজিস্ট্রেশন হয়। যার নং ৩২৮২, যা ২০০৯ সালের ২৪ জুন খারিজও করা হয়, যার হোল্ডিং নম্বর ৭৪৪। তিন বছর ধরে জমির কর পরিশোধসহ সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ভূমিহীন হিসেবে বাড়ি করে বাবা, স্ত্রী ও দু মেয়ে নিয়ে বসবাস করে আসছি। বন্দোবস্ত করা জমি পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ন ও মূল্যবান হওয়ায় মাসুদউজ্জামান তা বিক্রি করার জন্য প্রস্তাব দেন। আমরা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেই। এরপর মাসুদউজ্জামান আমার ও বাবার নামে তিনটি মামলা দেন। তিনি জানান, ২০১২ সালের ৯ মার্চ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করে কোর্টে চালান দেয়। এরপরের দিন মাসুদউজ্জামান ও তার দলবল বাড়িতে থাকা আমার স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করে এবং হুমকির মুখে জোর করে ১৫০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেন।
আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করে আরো বলেন, পরবর্তী সময়ে মানবাধিকার সংস্থার পরামর্শে ২০১২ সালের ২০ মে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আমরণ অনশন করলে জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্ত কমিটির প্রধান করে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তদন্তের পর জেলা প্রশাসক আওয়ামী লীগ নেতা লিটু বিশ্বাসের অবৈধ ওই স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য চিঠি দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত অপসারণের কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাসুদউজ্জামান লিটু বলেন, ওই জমি বিক্রির জন্য প্রস্তাব দিলে তিন লাখ টাকা মূল্যে জমি কিনি। বিষয়টি স্থানীয় সুধীমহল জানে। ওই জমিতে স্থাপনা নির্মাণ শুরু করলে রাজ্জাক একের পর এক বানোয়াট অভিযোগ তোলেন। বানোয়াট অভিযোগের কারণে স্থানীয় গণমান্যরা সালিস করেন। রাজ্জাককে তিন শতক জমি দেয়ার প্রস্তাব দেন। আমি শান্তির লক্ষ্যে সে প্রস্তাব মেনে নিয়ে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করার পাশাপাশি রাজ্জাকের তিন শতক জমিতে মাটি দিয়ে ভরাটও করে দিই। এসব এলাকাবাসীর অজানা নয়। অথচ তিনি সামাজিক সমঝোতাও না মেনে বানোয়াট অভিযোগ তুলে বিভিন্ন স্থানে স্বার্থ সিদ্ধির নাটক করছেন।