চুয়াডাঙ্গার জমি আত্মসাৎ করতে সপরিবারে ভোটার তালিকায় নাম?

ভারতীয় নাগরিক রাজকুমারসহ সকলের নাম বাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন

 

ফাইজার চৌধুরী: চুয়াডাঙ্গা শহরের পুরাতন গলির বাসিন্দা বলে দাবিদার বর্তমানে কোলকাতায় বসবাসকারী হরিপ্রসাদের বড় ভাই ঢাকা গুলশান এলাকার ভোটার তালিকায় নাম ওঠানো রাজকুমার ও তার স্ত্রী অঞ্জলি, ছেলে রাজকুমার, জিতেন্দ্র কুমার ও মেয়ে সোনিয়া আগরওয়ালার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গত ২৪ ডিসেম্বর বুধবার সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদিকে আলমডাঙ্গার আলোচিত পাডিয়া গ্রুপের দু ভাইয়ের বিষয়েও নতুন করে তদন্ত শুরু করেছে কমিশন।

Chuadanga Rajkumar pic 01(25-08-14)

চলতি বছর ২৫ আগস্ট অভিযুক্ত রাজকুমারের সহোদর হরিপ্রসাদ তার ভাইয়ের বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে তাকে প্রতারণামূলক বঞ্চিত করার অভিযোগ এনে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। হরিপ্রসাদের লিখিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে পরদিন দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রথম পাতায় ওই সংবাদ ছাপা হয়। হরিপ্রসাদ লিখিত অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ সরকার ভারত ও পাকিস্তানের সাথে এখনও দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন না দিলেও রাজকুমার ও স্ত্রী অঞ্জলি এবং তিন ছেলে-মেয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিক। তারা বাংলাদেশে আগরওয়াল, কুমার ও দেবী এবং ভারতে জালান পদবি ব্যবহার করেন। তাদের বাংলাদেশে ঠিকানা বাসা নং ৩০, ফ্লাট নং-৩-এস,রোড নং ১১৮, গুলশান-১, ঢাকা এবং ভোটার নং রাজকুমার (২৬১১০৬৪৮৩৫২১), অঞ্জলি দেবী (২৬১১০৬৪৮৩৫২২), মেয়ে সোনিয়া আগরওয়ালা (২৬১১০৬৪৮৩৫২৩), দু ছেলে জিতেন্দ্র কুমার (২৬১১০৬৪৮৩৫২৪) ও রাজেন্দ্র কুমার (২৬১১০৬০০০২২৪)। ভারতে ঠিকানা বাড়ি নং ৬৭, ফ্লাট নং ডি-৫, পার্কস্ট্রিট-কোলকাতা। ভারতে ভোটার নং রাজকুমার জালান (ডিডব্লিউকে-১৩৫৩২০০), অঞ্জলি জালান (ডিডব্লিউকে ১৩৫৩২১৮), মেয়ে সোনিয়া জালান (ডিডব্লিউকে ২০০২৪৬৭), দু ছেলে জিতেন্দ্র কুমার জালান (ডিডব্লিউকে ২০০২৪৭৫) ও রাজেন্দ্র কুমার জালান (ডিডব্লিউকে ২০০২৪৮৩)। এছাড়া ভারতে রাজকুমারের রেশনকার্ড নং বিবি ৭৮৯৫৪৬ এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স নং ডব্লিউ বি ২৫-০০১০৪৫।

অঞ্জলি জালানের নামে কোলকাতার পার্কস্ট্রিটের ফ্লাট ছাড়াও সল্টলেকে আরো একটি চারতলা ভবন কিনেছেন। যার ঠিকানা সিকে-১৮৫, সেক্টর-২, সল্টলেক, কোলকাতা। অঞ্জলি জালানের নামে ২০০০ সাল থেকে ত্রিনয়নী এক্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড (১ আর এন মুখার্জী রোড, মার্টিন বার্ন হাউস ষষ্ঠ তলা, কক্ষ নং ৬৪ ও ১৬, কোলকাতা)। কোলকাতা বড় বাজারে বাঙ্গড় বিল্ডিঙে আরো একটি অফিস আছে। কোম্পানির নামে একটি হোন্ডা সিআরবি জিপ গাড়ি আছে। এছাড়া রাজকুমার কোলকাতায় তার শ্যালক গণেশ মুন্দ্রাহ’র সাথে যৌথভাবে হাউসিং ব্যবসা করছেন। ভারত থেকে স্ত্রীর কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশের জন্য পণ্য কিনছেন রাজকুমার। অর্থাৎ নিজেই বিক্রি করছেন এবং নিজেই কিনছেন। অতি সম্প্রতি রাজকুমারের গোটা পরিবার আমেরিকায় নাগরিকত্ব পেতে তৎপরতা শুরু করেছেন। রাজকুমারের এ কর্মকাণ্ড চুয়াডাঙ্গা ও ঢাকার পৈত্রিক জমি আত্মসাতের জন্য, তার ছোট ভাই হরিপ্রসাদের অভিযোগ আমলে এনে শুরু হয় তদন্ত। তদন্ত শেষে সত্যতা পেয়ে ওই সকল ভারতীয় নাগরিকের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের আগেই রাজকুমার পরিবারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগেও ইসি একাধিকবার ভোটার তালিকায় ভারতীয় নাগরিকদের সন্ধান পেয়েছে। কিন্তু কমিশনের দৃশ্যমান ভূমিকার অভাবেই অসাধু চক্রের সহযোগিতায় বিদেশিদের ভোটার করার অপকৌশল এখনো অব্যাহত রয়েছে।

ইসিসূত্র জানায়, চুয়াডাঙ্গার হরিপ্রসাদ, আলমডাঙ্গা থেকে একাধিক, রাজধানীর সূত্রাপুরের অ্যাডভোকেট বিষ্ণুপদ দাসসহ বেশ কয়েকজনের অভিযোগের ভিত্তিতে ইসি এ সকল ভারতীয় নাগরিকের সন্ধান পায়। পরে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আঞ্চলিক এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সংশোধনকারী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় ইসি। বিদেশি নাগরিক ও রোহিঙ্গাদের ঠেকাতে ১৪টি উপজেলাকে বিশেষ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করার পরও ইসি বিদেশি নাগরিকদের ঠেকাতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।

স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধির সহায়তায় বিদেশি নাগরিকরা কৌশলে ভোটার তালিকায় প্রবেশ করছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ইসিতে অভিযোগ করেছেন। তারপরও ইসি কঠোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো ওই অভিযোগে বিদেশি নাগরিকদের ভোটার করতে সহায়তা করছেন এমন জনপ্রতিনিধির নামও রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এছাড়াও সম্প্রতি সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা ইসিকে জানিয়েছে, বিদেশিদের (বিশেষ করে ভারতিয়) জাতীয়তা এবং জন্মসনদ প্রদানকারী জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার নেয়ার সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় গৃহীত হলেও এর সঠিক বাস্তবায়ন হয়নি। জনপ্রতিনিধিরা নিজের ভোটব্যাংক বৃদ্ধির জন্য রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে অর্থের বিনিময়ে ভারতীয় এবং রোহিঙ্গাদের জন্মসনদ দিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে ইসি সূত্র জানিয়েছে, যেসব জনপ্রতিনিধি বিদেশি নাগরিকদের ভোটার করতে বিভিন্নভাবে সহায়তা করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ভোটার তালিকায় বারবার বিদেশি নাগরিক প্রবেশ করছেন। সূত্র আরো জানায়, জনপ্রতিনিধিদের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে বারবার অভিযোগ এলেও ইসি দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা নেয়নি বরং সংশ্লিষ্ট জেলাতে দু-একটা চিঠি দিয়েই দায় সেরেছে।

Leave a comment