সংবাদপত্র সমাজের আয়না। সব আয়নায় কি সঠিকভাবে প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়? পারদ প্রলেপের হেরফের, ঢেউ খাওয়ানো কাঁচ কি যথাযথ প্রতিচ্ছবি দিতে পারে? না, সব আয়না যেমন সঠিক হয় না, তেমনই কিছু সংবাদ মাধ্যমেও সমাজের সঠিক চিত্র ফুটে ওঠে তা হলফ করে বলা যায় না। মূলত সে কারণেই সংবাদমাধ্যমগুলোকে প্রভাবমুক্ত হয়ে সমাজের সঠিক চিত্র তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রভাবে প্রভাবিত প্রতিচ্ছবি তথা সংবাদ বা প্রতিবেদন পরিবেশন অবশ্যই ক্ষতিকর। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের সাথে সৌজন্য মতবিনিময়কালে সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর প্রভাবমুক্ত সঠিক সংবাদ পরিবেশনের যে তাগিদ দিয়েছেন তা যথার্থ। এ তাগিদ অবশ্যই সংবাদ মাধ্যমকে তথা গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল করবে।
সংবাদ মাধ্যম সমাজের শুধু সঠিক চিত্রই তুলে ধরে না, সমাজের দিকনিদের্শনায় সহায়তা করে। সমাজের নেতৃত্বদানকারীদের কর্মকাণ্ডে সঠিক সমালোচনার অর্থ যেমন নিন্দা নয়, তেমনই পরিবেশিত সকল সংবাদ সব সময়ই সঠিক হয় তাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। কারণ সংবাদকর্মীদের তো কারো না কারোর নিকট থেকেই সংবাদের তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়। তবে হ্যাঁ, তথ্য সংগ্রহে বাড়তি সতর্কতা অবশ্যই দায়িত্বশীলতার অংশ। কালক্রমে পাঠককূল যেমন সচেতন হয়েছে, তেমনই সংবাদ মাধ্যমকেও দায়িত্বশীল হতে হয়েছে। কতোটা দায়িত্বশীল বা তাতে কতোটা ঘাটতি তা বিচার করেন মূলত পাঠক। অবশ্যই সাজঘরে কেউ বাঁকা কাঁচের আয়না রাখে না। পারদ প্রলেপে হেরফেরের আয়নাও চেহারা দেখার জন্য কেউ আগ্রহী হয় না। বিষয়টি উপলব্ধি প্রয়োজন।
ভালো কাজে উৎসাহ দান, মন্দপথে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করতে যেমন দরকার আন্তরিকতা তেমনই প্রয়োজন পদে পদে সতর্কতা। ভালো কাজে উৎসাহের বদলে প্রভাবিত হয়ে বা দলীয় সংকীর্ণতায় আবদ্ধ হয়ে সংবাদ পরিবেশন অবশ্যই সমাজের জন্য অকল্যাণকর। কারণ তাতে ভালো কাজের উদ্দীপনায় ভাটা পড়ে। আবার মন্দকে মন্দ বলতে না পারার মতো দলীয় সঙ্কীর্ণতা বা স্বার্থান্ধে পরাধীনতা সংবাদ মাধ্যমকেই কলুষিত করে। সুন্দর সমাজ গঠনে, উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুতে দরকার নিজ নিজ ক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতা, কর্তব্যপরায়নতা। দেশে ছাপা হরফের এবং বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম যে বিপ্লব ঘটিয়েছে তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশেনে সকলকে আন্তরিক হওয়া সত্যিই খুব জরুরি।