স্টাফ রিপোর্টার: মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের রায় আজ মঙ্গলবার ঘোষণা করা হবে। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবারের কার্যতালিকায় মামলাটি রাখা হয়েছে।
গতকাল সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২’র চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। বিচারক প্যানেলের অন্য দু সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি শাহীনুর ইসলাম ও বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া। গত ২০ আগস্ট সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হওয়ায় রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিন মামলার সর্বশেষ ধাপ যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষ হওয়ায় যেকোনো দিন রায় দেয়া হবে বলে জানানো হয়। জামিনে থাকা কায়সারের জামিন বাতিল করে সেদিন তাকে কারাগারেও পাঠিয়ে দেন ট্রাইব্যুনাল। কায়সারের বিরুদ্ধে ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যার একটি, মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের ১৩টি এবং ধর্ষণের দুটি অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ১৫ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২১ মে কায়সারকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত বছরের ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আদালত। এ বছরের ৪ মার্চ কায়সারের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য প্রদান করে প্রসিকিউশন। ২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল-২। ৯ মার্চ থেকে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। কায়সারের পক্ষে অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ ও রানা দাশগুপ্ত পাল্টা আইনি পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপন করেন। গত ৭ আগস্ট থেকে কায়সারের পক্ষে অ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। একই দিনে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করে। এ মামলায় ৩১ জন সাক্ষী কায়সারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষ তাদের জেরাও করে। তবে ট্রাইব্যুনালে এ প্রথম কোনো আসামি হিসেবে কায়সারের পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষ্য দেয়া হয়নি।
কায়সারের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরে সৈয়দ কায়সার প্রথমে হবিগঞ্জ মহাকুমা শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ৫০০/৭০০ স্বাধীনতাবিরোধী লোক নিয়ে নিজের নামে কায়সার বাহিনী নামে পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করার জন্য একটি সহযোগী বাহিনী গঠন করেন। তিনি নিজে ওই বাহিনীর প্রধান ছিলেন। কায়সার বাহিনী নামাঙ্কিত এ বাহিনীর নিজস্ব ইউনিফরমও ছিলো। কায়সার এ বাহিনীর মাধ্যমে তিনি হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বৃহত্তর কুমিল্লায় হত্যা, গণহত্যা, মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, ধর্ষণ, হামলা, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালান। তিনি পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের লোক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ চালান।