গাংনী প্রতিনিধি: অবশেষে উদ্ধার হলো মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ষোলটাকা গ্রামের অপহৃত কলেজ ছাত্র রাব্বি হোসেন (১৬)। তবে অপহরণকারী ও অপহরণ রহস্য উন্মোচন হয়নি। মুক্তিপণসহ অপহরণ বিষয়ে এলাকায় চলছে নানান গুঞ্জন।
গতকাল শনিবার দুপুরে নিজ বাড়িতে কথা হয় উদ্ধার হওয়া কলেজ ছাত্র রাব্বি হোসেনের সাথে। তিনি জানান, কয়েকজন অজ্ঞাত অপহরণকারী তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। তাকে এক মাঠের মধ্যে রাখা হয়। গত শুক্রবার রাতে তার নিজ গ্রামের পার্শ্ববর্তী তেরাইল-জোড়পুকুরিয়া মাঠের মধ্যে তাকে ছেড়ে দেয়। তাকে মারধর কিংবা দুর্ব্যবহার করেনি অপহরণকারীরা। কী কারণে অপহরণ তা জানাতে পারেনি রাব্বি।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম জানান, পুলিশের অভিযানের ফলে বাধ্য হয়ে রাব্বিকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। তবে তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি। এদিকে গতকাল ষোলটাকা গ্রাম ঘুরে বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায় ভিন্ন ভিন্ন মতামত। শোনা গেছে নানান গুঞ্জন। গ্রামের নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানান, বিষয়টি সাজানো নাটক হতে পারে। অপহরণকারীরা নিয়ে যাবে আবার মুক্তিপণ ছাড়াই ছেড়ে দেবে এটি কীভাবে সম্ভব? তাছাড়াও দু দিন তাকে আটকে রাখার কোনো আলামত কিংবা বিশ্বাসযোগ্য কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না গ্রামবাসী।
মুক্তিপণ দিয়ে রাব্বি মুক্তি পেয়েছেন বলে গ্রামে জোর গুঞ্জন রয়েছে। গ্রামের অনেকেই জানিয়েছেন, রাব্বির ভগ্নিপতি ব্যবসায়ী নাছিম মিয়ার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ নিয়ে অপহরণকারীরা রাব্বিকে মুক্তি দিয়েছে। সহায় সম্পতি রক্ষার বিষয়টি মাথায় নিয়ে মুক্তিপণ ও অপহরণের বিষয়গুলো ভুলে থাকতে চাচ্ছেন রাব্বির পিতামাতা ও নাছিম মিয়া।
গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম অবশ্য গুঞ্জনের পক্ষে সাই দিয়ে বলেছেন, অপহরণকারী কারা এবং কী কারণে এই অপহরণ তা তদন্ত করছে পুলিশ। রহস্য উন্মোচনের খুব কাছাকাছি পৌছে গেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে উদ্ধারের পর রাব্বিকে গাংনী থানায় আনা হয়। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রাব্বির কথাবার্তার অনেক অসঙ্গতি প্রকাশ পায়। এতে অপহরণ বিষয়ে পুলিশের মনে সন্দেহ দানা বেধে ওঠে। তাই তদন্তের মোড় কিছুটা ঘুরে যায়।
রাব্বির পিতা জাহাঙ্গীর ও মা রওশন আরা জানান, তারা ছেলেকে ফেরত পেয়েছেন এর বেশি কিছু তাদের দরকার নেই। মুক্তিপণ দেয়া হয়নি এবং অপহরকদের সাথে তাদের কোনো কথাবার্তা হয়নি বলেও দাবি করেন। সাজানো নাটকের বিষয়টিও অস্বীকার করেন তারা।
উল্লেখ্য, ষোলটাকা গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথমবর্ষের ছাত্র রাব্বি বুধবার রাতে গ্রামের মাঠে দাউদ শাহের আশ্রমের পার্শ্ববর্তী একটি ঘরে শুয়ে ছিলেন। গভীর রাতে তাকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। ভক্ত হিসেবে আশ্রমে খেদমতের পাশাপাশি ভগ্নিপতি নাছিম মিয়ার কয়েকটি পুকুরও পাহারা করতেন রাব্বি। এ ঘটনায় রাব্বির পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো মামলা কিংবা অভিযোগ করা হয়নি।