মাজেদুল হক মানিক: দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত পেঁয়াজ-৫’র আবাদ। কাঙ্ক্ষিত ফলনে সন্তুষ্ট চাষিরা। ফলে এ জাতের পেঁয়াজ আবাদে তাদের আগ্রহ বাড়ছে। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বারি পেঁয়াজ-৫’র উৎপাদন বাড়ানো গেলে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব। এতে বছরে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
মেহেরপুর গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কৃষক মহিবুল ইসলাম বলেন, চলতি মরসুমে এক বিঘা জমিতে বারি উদ্ভাবিত পেঁয়াজ-৫ প্রদর্শনীমূলকভাবে চাষ করেছেন। সেচ, বীজ, সার ও কীটনাশকসহ ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার টাকা। জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ১০০ মণ। প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকা দরে। ক্ষেতে থাকতেই সব পেঁয়াজ বিক্রি হয়ে গেছে। এতে তার লাভ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। মহিবুলের এ সাফল্য দেখে এলাকার অনেক কৃষক পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। তারা আগামী মরসুমে বারি পেঁয়াজ-৫ চাষ করবেন বলে জানিয়েছেন।
গাংনী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণাকেন্দ্র বারি পেঁয়াজ-৫ জাতটি উদ্ভাবন করে। পরীক্ষামূলক চাষাবাদের পর কৃষকদের মাঝে বীজ দেয়া হয়। সমন্বিত মুজিবনগর কৃষি উন্নয়নে প্রকল্পের আওতায় গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস মহিবুল ইসলামের ক্ষেতে প্রদর্শনী করে। চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন মহিবুল। বর্তমানে সবজিখ্যাত এলাকা যশোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও ও কুড়িগ্রামে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে এ জাতের পেঁয়াজ।
সূত্র আরো জানায়, দেশে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজের ব্যাপক সংকট থাকে। সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে বারি পেঁয়াজ-৫’র উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ জাতের পেঁয়াজ আবাদের মাঠ প্রদর্শনী শুরু হয় ২০০৮ সালে। চলতি বছর সাহারবাটি মাঠসহ বিভিন্ন এলাকায় বারি পেঁয়াজ-৫’র আবাদ করা হয়েছে।
প্রদর্শনী প্লটের মাধ্যমে মহিবুল ইসলামের সফলতায় এলাকার চাষিদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। একই গ্রামের কপিচাষি ময়নাল হোসেন জানান, চলতি মরসুমে তিনি আগাম কপিচাষ করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিনিয়োগকৃত মূলধন ওঠাতে পারেননি। লোকসানে আগাম কপি বিক্রি করতে হয়েছে। আগামী মরসুম থেকে বারি পেঁয়াজ-৫ চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১ লাখ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়। উৎপাদন হয় ২২ লাখ টন। আর বছরে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ২৭ লাখ টন। সে অনুযায়ী ঘাটতি থাকে ৫ লাখ টন। এ ঘাটতি পূরণ করতে প্রতি বছর ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। গত বছর ওই দু দেশ থেকে চার লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বারি পেঁয়াজ-৫ জাতের চাষ সম্প্রসারণ করা গেলে সংকটকালীন চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। কৃষকরা হবেন লাভবান।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাজেদুল ইসলাম বলেন, শীতকালীন পেঁয়াজ ওঠার আগে দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি দেখা দেয়। চাহিদা পূরণে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করতে বৈদেশিক মুদ্রার একটি অংশ ব্যয় হয়। এক্ষেত্রে বারি পেঁয়াজ-৫ আবাদ সম্প্রসারণ করা গেলে ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। এজন্য কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে।
বারি পেঁয়াজ-৫ চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, মে-জুনের মধ্যে এ জাতের পেঁয়াজের বীজ বপন করতে হয়। চার মাসের মধ্যেই ফসল তোলা যায়। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে উৎপাদন ভালো হয়। আর বৃষ্টি না হলে সেচের মাধ্যমেও চাষ করা যায়। সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করে। তখন বাজারে পণ্যটির দাম চড়া থাকে। ফলে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। এছাড়া এর উৎপাদন খরচ কম। খেতেও সুস্বাদু।