আলমডাঙ্গা কাবিলনগর মাদরাসার স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারী অধ্যক্ষকে পুনরায় নিয়োগ দেয়ার পাঁয়তারা
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার কাবিলনগর মাদরাসার স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারী অধ্যক্ষ সহিদুল ইসলামকে আবারও স্বপদে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ তুলেছে গ্রামবাসী। তার প্রতিবাদে গ্রামবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। মাদরাসা কমিটির সভাপতি মোজাফফর হোসেন লালুর বিরুদ্ধে সকালে মানববন্ধ কর্মসূচি পালনে বাধা দেয়ার অভিযোগও তুলেছে গ্রামবাসী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কাবিলনগর নসরুল উলুম আলিম মাদরাসার শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী মাবনবন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেয়।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের কাবিলনগর গ্রামেরই রয়েছে এতিহ্যবাহী মাদরাসা নুসরুল উলুম আলিম মাদরাসা। এ মাদরাসার অর্থ আত্মসাৎ ও ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেয়ার অভিযোগে জনরোষে পড়েন অধ্যক্ষ মাও. সহিদুল ইসলাম। তিনি স্বেচ্ছায় ২০১৩ সালের ১৫ আগস্ট চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। ওই সময় দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় অধ্যক্ষ সহিদুল ইসলাম অবরুদ্ধ হয়ে অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর করার সংবাদ গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়। ৩ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনে বিপর্যয় ঘটানোর জন্যও তাকে ওই সময় অভিযুক্ত করা হয়েছিলো। তাছাড়া ২০১৩ সালের আলিম পরীক্ষার্থী এক ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটি তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিলো। ওই সময় কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে তিনি আগেভাগে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিলেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে। এদিকে পদত্যাগের পর সহিদুল ইসলাম পুনরায় মাদরাসায় অধ্যক্ষের পদে যেকোনো ভাবে ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে তিনি স্থানীয় সরকার দলীয় নেতাদের সাথে নতুন করে সখ্য গড়ে তোলেন।
অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে তাকে স্বপদে ফিরিয়ে আনতে মাদরাসা কমিটির সভাপতি মোজাফফার হোসেন লালু মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাকে নতুন করে নিয়োগ দিতে অনিয়মিত ও নামমাত্র প্রকাশ সংখ্যার দৈনিক পত্রিকায় গত ১২ মে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। পত্রিকা দুটির একটাও ওই এলাকায় প্রচারিত নয় বলে দাবি করেছে গ্রামের সচেতনমহল। গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতেই এ অপকর্ম করা হয়েছে বলে মন্তব্য তাদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মাদরাসার এক শিক্ষক বলেছেন, সহিদুল ইসলাম ২০১০ সালে এ মাদরাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি কুষ্টিয়ার ইবি থানার নৃসিংহপুর মাদরাসা ও গাংনী মাদরাসায় চাকরি করতেন। ওই ২টি প্রতিষ্ঠান থেকেও তাকে অর্থ ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে বিতাড়িত হতে হয়েছিলো বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে অতি গোপনীয়তার সাথে সাবেক অধ্যক্ষকে আবার স্বপদে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর মাদরাসার সকল শিক্ষার্থী সভাপতি বরাবর লিখিত দরখাস্ত দিয়েছে। সাবেক অধ্যক্ষকে পুনরায় অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হলে শিক্ষার্থীরা মাদরাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে ওই দরখাস্ত লিখেছে বলে জানা যায়। মাদরাসা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বদর উদ্দীন শিক্ষার্থীদের দরখাস্ত করার কথা শুনেছেন বলে উল্লেখ করে বলেন, সভাপতি ওই দরখাস্ত পাওয়ার পরও মত পাল্টাননি। তিনি জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা মাদরাসায় না পড়লেও সভাপতির কিছু যায় আসে না। পরের ছেলে মাঠে কাজ করবে না পড়বে তাতে তার কোনো লাভ-ক্ষতি নেই বলে সভাপতি লালু মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগকারীরা উল্লেখ করেছেন। সভাপতি নিজেই প্রাইমারি স্কুল পার হতে পারেননি। তিনি সভাপতি হয়েছেন টাকা কামানোর জন্য- এমন মন্তব্য করেছেন মাদরাসার সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য গহর বিশ্বাস। তিনি ছিলেন মানববন্ধন শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশের সভাপতি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ইছাহক আলই, হোসেন মণ্ডল, মঞ্জুল মণ্ডল, আশরাফুল হক, ইসমাইল হোসেন, রফিউল জোয়ার্দার, শুকুর আলই, মিজান, মহাবুল ইসলাম, মানোয়ার হোসেন, আবদার ফরায়েজী, নজরুল ইসলাম, আনছার আলই মেম্বরসহ মাদরাসার শিক্ষার্থীবৃন্দ।
বক্তারা মাদরাসার সভাপতি লালুর বিরুদ্ধে হুইপের নাম ব্যবহার করে ওই অপকর্ম করার অভিযোগ করেছেন। অভিযোগ করা হয়েছে- প্রথমে মাদরাসার সামনে মানববন্ধন করার সিদ্ধান্ত ছিলো। কিন্তু সভাপতি পার্শ্ববর্তী দু পুলিশ ফাঁড়ি থেকে পুলিশ নিয়ে গিয়ে তা ভণ্ডুল করে দেন। পরে রাস্তায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।