অ্যাডিলেইডে অস্ট্রেলিয়ার নাটকীয় জয়

মাথাভাঙ্গা মনিটর: অ্যাডিলেইড টেস্ট তার সব রোমাঞ্চ নিয়ে হাজির হলো শেষ সেশনে। ন্যাথান লায়নের অনন্য বোলিং ছাপিয়ে গেছে বিরাট কোহলির অসাধারণ ব্যাটিংকেও। ব্যাটে-বলের এ লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ভারতকে ৪৮ রানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। গতকাল শনিবার প্রথম টেস্টে ভারতকে হারিয়ে চার ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল অস্ট্রেলিয়া। অ্যাডিলেইড ওভালে চতুর্থ দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিলো ৫ উইকেটে ২৯০ রান। স্বাগতিকরা সেই রানেই দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করায় রোমাঞ্চকর সমাপ্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়। শেষ দিনে কমপক্ষে ৯৮ ওভারে ভারতের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৬৪ রান। তবে প্রথম সেশনে শিখর ধাওয়ান ও চেতেশ্বর পুজারাকে হারিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি ভারতের। ধাওয়ানকে ব্র্যাড হ্যাডিনের ক্যাচে পরিণত করে প্রথম আঘাতটা হানেন মিচেল জনসন। প্রথম ইনিংসে অর্ধশতক করা পুজারাকে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসবন্দি করেন লায়ন। ৫৭ রানে দুই উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যটা একটু কঠিন হয়ে পড়ে অতিথিদের জন্য। তবে কোহলি আর মুরালি বিজয়ের ব্যাটে শুরু হয় প্রতিরোধ। দিনের দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেট না হারিয়ে চা বিরতিতে যাওয়ার সময় ভারতের সংগ্রহ সেই ২ উইকেটেই ২০৫ রান। ম্যাচের চার দিন আর শনিবারের প্রথম সেশনে যা ভাবাই যায়নি, তা-ই তখন মনে হচ্ছিল খুব সম্ভব; ম্যাচ বাঁচিয়ে জয়ের দিকেই ছুটছিলো ভারত। শেষ সেশনে কমপক্ষে ৩৭ ওভারে তখন দরকার ১৫৯ রান। চা বিরতির পর এসে প্রথম ইনিংসের চেয়েও দুর্দান্ত একটি শতক তুলে নিলেন কোহলি। তবে বিপত্তি দেখা দিলো বিজয়ের তিন অঙ্কে যাওয়া নিয়ে। ৯৯ রানে গিয়ে যে স্নায়ুচাপে পড়লেন তা থেকে আর বের হতে পারলেন না; লায়নের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সুযোগ দিলেন ম্যাচে ফেরার। বিজয়ের বিদায়ে ভাঙে তৃতীয় উইকেটে কোহলির সাথে গড়া তার ১৮৫ রানের বড় জুটি। ৫৭ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতনের পর জুটি গড়েছিলেন এ দু জনে। তাদের দৃঢ়তায় এক সময়ে ভারতের সংগ্রহ ছিলো ২ উইকেটে ২৪২ রান। এরপর অজিঙ্কা রাহানে ও রোহিত শর্মাকে অল্প রানের ব্যবধানে আউট করে ভারতকে চাপে ফেলে দেন লায়ন। তবে উইকেটে কোহলি ছিলেন বলেই ম্যাচ বাঁচানো কঠিন কিছু মনে হচ্ছিলো না ভারতের জন্য। মারমুখী হয়ে ওঠা ঋদ্ধিমান সাহাকে দারুণ ঘূর্ণি বলে বোল্ড করার পর কোহলিকে মিচেল মার্শের ক্যাচ বানিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে আবার জয়ের স্বপ্ন দেখান লায়ন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪১ রান করেন কোহলি। তার ১৭৫ বলের ইনিংসটি ১৬টি চার ও ১টি ছক্কায় গড়া। মাত্র দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে অধিনায়কত্বের অভিষেকে জোড়া শতক করেন কোহলি। এর আগে এ কৃতিত্ব ছিলো কেবল গ্রেগ চ্যাপেলের। অস্ট্রেলিয়ায় স্বাগতিকদের বিপক্ষে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে জোড়া শতক করেন কোহলি। আর দু্ই ইনিংসেও শতক করে দলের হার এড়াতে না পারা দশম ব্যাটসম্যান তিনি। কোহলির বিদায়ের পর বেশি দূর এগোয়নি ভারতের সংগ্রহ। তাদের শেষ সাত ব্যাটসম্যানের কেউ ২০ বলের বেশিও খেলতে পারেননি, তাই প্রথম টেস্টে হার এড়াতে পারেনি ভারত। লায়নের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে ৭৩ রানে শেষ ৮ উইকেট হারায় অতিথিরা। ১৫২ রানে ৭ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার লায়ন। প্রথম ইনিংসে ১৩৪ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন অফস্পিনার। ২৮৬ রানে ১২ উইকেট নিয়ে তিনিই ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়। এই প্রথম ম্যাচে ১০ উইকেট নিলেন লায়ন। এর আগে তার ম্যাচ সেরা বোলিং ছিলো ১৬৫ রানে ৯ উইকেট। এর আগে ৭ উইকেটে ৫১৭ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া।
জবাবে প্রথম ইনিংসে ৪৪৪ রান করে ভারত। স্বাগতিকদের দুই ইনিংসেই শতক করেন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ডেভিড ওয়ার্নার। বাউন্সারের আঘাতে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার ফিলিপ হিউসের অকাল প্রয়াণের পর এটাই ছিলো তাদের প্রথম টেস্ট। এ টেস্ট জুড়ে ছিলেন তিনি। তার টেস্টে শেষ পর্যন্ত জয়ই পেল স্বাগতিকরা।