একের পর এক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং শিক্ষার্থী

দেশজুড়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের যেন হিড়িক পড়েছে। পিএসসি, জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের পর এখন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের খবর পাওয়া যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় পরীক্ষা স্থগিত করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জীবননগরের শাপলাকলি নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও ৪র্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা স্থগিত করেছে।

অপরদিকে চুয়াডাঙ্গার প্রদীপন বিদ্যাপীঠে শিশু পরীক্ষার্থীর খাতা সংশোধন করে দেয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টসূত্র জানিয়েছে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, প্রাথমিক ও মাধ্যামিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসব কী হচ্ছে? শিশু শিক্ষার্থীদের মানসপটে অনিয়মের যে ছাপ দেয়া হচ্ছে তা মুছবে কীভাবে? জাতির ভবিষ্যত এভাবে ধ্বংসের হেতু কী? ষড়যন্ত্র নাকি নগদে লাভ করতে গিয়ে ধ্বংসাত্মক খেলায় মেতে নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিচ্ছেন? যে যেখান থেকে যেভাবেই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করছেন তিনি আর যাই হোক শিক্ষার্থীর উজ্জ্বল ভবিষ্যত চান না। চান জাতির ভবিষ্যত ধ্বংস করতে।

দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকমণ্ডলীর অধিকাংশের মধ্যেই শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে আন্তরিকতার বদলে প্রাইভেট পড়ানোর কাজেই অধিক আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী বিদ্যালয়ের শিক্ষক কতোজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন তার নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন চালু করেছেন। এ প্রজ্ঞাপন শিক্ষার্থীদের জন্য কতোটুকু কল্যাণকর হয়েছে? এ প্রশ্ন যেমন সচেতন অভিভাবকমহলসহ শিক্ষানুরাগীদের কুরে কুরে খাচ্ছে, তেমনই একের পর এক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোনিবেশ কেড়ে নিচ্ছে। যদিও সরকারের দায়িত্বশীলদের তরফে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করা হচ্ছে না। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রয়োজনে মোবাইলফোন, ফেসবুক ইন্টারনেট সাময়িক বন্ধ রাখা হবে। এ উক্তির মধ্যদিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে মন্ত্রণালয়ের যে অসহায়ত্বই ফুটে উঠেছে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। পাবলিক পরীক্ষার পাশাপাশি এখন বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের হিড়িক পড়েছে। কেন? পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করাকে কেউ কেউ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করলেও এটা যে দায়িত্বশীলদের চরম ব্যর্থতা তা অস্বীকার করবেন কীভাবে? অজুহাত নয়, যেকোনো মূল্যে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সফল হতে হবে।

পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে শুধু মেধার অবমূল্যায়নই হয় না, শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় মনোনিবেশ হারিয়ে শিশুকালেই নীতিবর্জিত মানসিকতা লালন করতে শুরু করে। যা জাতির জন্য আত্মঘাতী। অবশ্য সংশ্লিষ্টদেরই কেউ না কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক রয়েছেন যারা বিষয় ভিত্তিক প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করেন, তাদের অনেকেই পরীক্ষার আগে প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের সাজেশনের নামে ৯০ ভাগ প্রশ্ন জানিয়ে দেন। দীর্ঘদিনের এ অনিয়ম রোধ করা যায়নি বলেই কি এখন প্রশ্নপত্রটাই প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে? নাকি প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে ছাপাখানার কারো মাধ্যমে? খতিয়ে দেখে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে পরিস্থিতি যে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য। তা ছাড়া একজন শিক্ষক যখন পরীক্ষা কেন্দ্রে তার প্রাইভেট শিক্ষার্থীর খাতা ঠিক করে দেন তখন সেই শিক্ষকের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তো ওঠেই? অনৈতিকতা কখনোই কল্যাণকর হয় না। সংশ্লিষ্ট কর্তারা দয়া করে বিবেকটা জাগিয়ে তুলে দায়িত্ববান হোন।

Leave a comment