শীতল বাতাসসহ কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল : অসহনীয় হয়ে উঠছে শীত

একদিনের ব্যবধানে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে তাপমাত্রা নেমেছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ দেশের পশ্চিম-উত্তরাঞ্চলে একদিনের ব্যবধানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমেছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বেড়েছে শীতের তীব্রতা। গতকাল সকাল ১০টার পর চুয়াডাঙ্গা থেকে কুয়াশার চাদর সরতে শুরু করে। সূর্যের দেখা মেলে পৌনে ১১টার দিকে। একই সাথে বয়েছে শীতল বাতাস। আর রাজশাহীতে? অভিন্ন চিত্র ছিলো গতকাল। গতরাতেও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে ফেরি চলাচল কুয়াশার কারণে বিঘ্নিত হয়।

গতকাল সোমবার রাজশাহীতে রেকর্ড করা হয়েছে চলতি মরসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশেরও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল এটাই রেকর্ড করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১১ দশমিক ৫ এবং সর্বোচ্চ ছিলো ২৪ দশমিক শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার রাজশাহীতে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গাতেও ছিলো প্রায় অভিন্ন। একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমেছে ৫ ডিগ্রি। আবহওয়া বিবেষজ্ঞরা বলছেন, রোববার পর্যন্ত আকাশে মেঘ ছিলো। সোমবার তা কেটেছে। ফলে তরতর করে নেমেছে তাপমাপাযন্ত্রের পারদ। দুর্ভোগে পড়ছেন নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষ। বোরো বীজতলা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। অপরদিকে তীব্র শীতে অনেকেই আগুন পোয়াতে তথা আগুনের উষ্ণতা নিতে গিয়ে অসাবধানতায় দ্বগ্ধ হয়। বিশেষ করে অগ্নিদ্বগ্ধ শিশুদের হাসপাতালে নেয়ার যেন হিড়িক পড়ে। আর মাফলার চাদর জড়িয়ে শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযানের যাত্রী হয়ে অনেকেই মরে অকালে। এছাড়া মাফলার গলায় জড়িয়ে শ্যালোইঞ্জিন চালু করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে গুরুতর জখমের সংখ্যাও বেড়ে যায়। এবার শীতের শুরুতেই চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের খুদিয়াখালীর তরুণ কৃষক হাবিবুর রহমান (১৮) গলায় জড়ানো মাফলার মন্টু মেশিনে জড়িয়ে গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাবিবুর রহমান খুদিয়াখালীর ইদ্রিস আলীর ছেলে। গতকাল সকালে গ্রাম সংলগ্ন মাঠে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে শীত জেঁকে বসেছে। তীব্র শীতে সব বয়সের মানুষের কাজ কর্মে স্থবিরতা নেমে এসেছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় সকালে ও সন্ধ্যায় শহর ও গ্রামগঞ্জের মোড়ে মোড়ে খড়-কুটো জ্বালিয়ে আগুন তাপাতে দেখা যাচ্ছে। মেহেরপুরে হাড় কাঁপানো শীত পড়তে শুরু করেছে। শীতে সব বয়সের মানুষের কাজ কর্মে স্থবিরতা নেমে এসেছে। কুয়াশার কারণে গত কয়েক দিন থেকে বেলা ৯/১০টা পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। কনকনে শীতের কারণে ঘুম ভাঙলেও লেপ ছেড়ে উঠে আসা কষ্টকর। অনেকে লেপ ছেড়ে বের হয়ে এলেও শরীর তাপাতে খড়-কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোয়াতে দেখা গেছে। শহরের চায়ের দোকানগুলোতে ভিড় লেগে থাকছে এক কাপ গরম চায়ের জন্য। সকালের সাথে সন্ধ্যার চিত্র প্রায় একই রকম। গবাদি পশুকে পাটের চট এবং কাপাড়ে ঢাকতে দেখা গেছে। অনেককে বেশটুকু বেলা করে শহরের দোকান-পাট খুলতে দেখা গেছে। আবার অনেককে সকাল সকাল দোকান বন্ধ করতে দেখা গেছে। একই সাথে অন্য দিনের তুলনায় সকাল সকাল শহরের রাস্তা-ঘাট ফাঁকা হয়ে পড়ছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আশরাফুল আলম ঢাকা আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে জানান, চলতি ডিসেম্বরের শেষার্ধে রাজশাহী অঞ্চলে ১ থেকে ২টি মৃদু (৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) অথবা মাঝারি (৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এছাড়া মাসের শেষে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত এ অঞ্চলে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানান তিনি। এদিকে আসন্ন শৈত্যপ্রবাহ মোকাবেলায় আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ। অভিন্ন আবহাওয়ার মধ্যে পড়তে পারে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও যশোরের বাসিন্দারা।

আবহওয়া অফিস জানিয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘনকুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। দেশের দক্ষিণাংশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে এবং দেশের অন্যত্র প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।