ব্যর্থতার কষ্ট অন্তরে অনবরত রক্তক্ষরণ

দীর্ঘদিন পর নদীর সাথে ফোনালাপ : বিক্ষিপ্ত কথোপকথন

 

…………. ভোলাইনাথ পটল…………….

 

তখন অনেক রাত। ঘুরোপথে আপন ঠিকানায় পৌঁছুতে নির্ঘাত প্রভাত। বহুদিন পর ফিরছি। কে কোথায় কে জানে? কতোদিন কথা হয় না নদীর সাথে। নন্দিনীর নামটাও মুছে যাওয়ার মতো ফেকাসে হয়ে গেছে স্মৃতিপট। পুরোনো সেলফোনে থাকা নম্বর-নামের তালিকায় ওদের খুঁজে পাওয়ার ভরসা। ফোন করলাম নদীর নম্বরে। সাড়া নেই। নন্দিনি! নারী কণ্ঠের বদলে ঘুমভাঙা গম্ভীর পুরুষ কণ্ঠ। সর্বনাশ! নন্দিনি আছে? প্রশ্ন করতেই ধমক দিয়ে বললেন, ধুর মশাই। মধ্যরাতে ভুল নম্বর। কেটে দিলেন।

নদীর নম্বরে সাড়া নেই, নন্দিনীর নম্বরটাও এক বছরে ভুল নম্বর হয়ে গেছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অগত্যা আকাশের তারা গোনা আর পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া অর্ধচন্দ্রটার ময়নাতদন্তের ব্যর্থ চেষ্টা করা। এরই মাঝে চি চি করে বেজে উঠলো ফোন। অচেনা নম্বর রিসিভ করতেই চেনা কণ্ঠ। বললো- পটল দা, কতো দূর? তুমি তো জানো, প্রতীক্ষার প্রহর গোনা কতোটা কষ্টের।

– কেমন আছো? কেমন ছিলে? ভালো নেই, ভালোবেসে। থাক থাক, গানে গানে আর ভোলাতে হবে না। এতোদিনেও ভোল পাল্টাওনি দেখছি।

– সত্যি বলছি। সময়ের স্রোতে অবিরাম ক্ষয়ে ক্ষেয়ে নিজের কাছে নিজেই যেনো কেমন অচেনা হয়ে গেছি। তুমিও কি তাই? মোটেও না। মুটিয়ে গেলেও তোমার মতো বুড়োটে হতে আমি রাজি নই। এসো, ম্যাজিকের মতো তোমাকে তারুণ্যে ভরপুর করে দেবো।

– আসছিই তো, কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমার খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাবো। সুঁচ আর সুতোর মতো অতোটা না হলেও…..সেই কবে থেকেই তো চাই, চন্দ্রমল্লিকা আর মাধবিতে ভরা মায়াবি আঙিনায় স্বর্গ ঝরাও তুমি, পারলে না।

– না পারার মধ্যেও কিছু সুখ থাকে। উপলব্ধিতে। তা না হলে রবি ঠাকুর অন্ধকারের মধ্যেও আলো দেখলেন কীভাবে? তুমিও দেখছি দুদুর মতো দুঃখ ভোলার যুক্তিতে দারুণ পারদর্শী হয়ে উঠেছো। ব্যর্থতার ব্যথা দৃশ্যমান না হলেও অন্তরে অনবরত কষ্টের রক্তক্ষরণ হয়।

– ঠিকই বলেছো। ছিটকে পড়ে, ব্যাচারী এখন তার সহোদর বুলাকে দিয়ে চুয়াডাঙ্গা বিএনপিকে ঘুলিয়ে রাখতে চায়। দেশের মাটিতে পা দিয়েই বুঝেছি। বাবু খানের নিশ্চিত সেক্রেটারি হওয়ার পথে বুলাই এখন বড় কাঁটা। এ অবস্থা জিইয়ে থাকলে চুয়াডাঙ্গা বিএনপির জন্য যে দশা অপেক্ষা করছে, তা কবে বুঝবেন খালেদা জিয়া?

– বুঝুক আর খুঁজুক। দফায় দফায় নেতৃত্ব বদলানোর খেসারতও গুণুক। মেহেরপুরে অরুন বিনে বিএনপির চিত্রটাও দেখুক। ওসব নিয়ে তোমার অতো মাথা ঘামানোর দরকার কি? নিজের চরকায় তেল দাও।

তোমার কাছেই তো শিখেছি, চরকা পেলেই তেল দেয়া। তা না হলে চুয়াডাঙ্গার কোন বিশ্বাস পরিবার কোন দেশে নতুন ঠিকানা গড়ছে তার খোঁজ নিতে যাবো কেন?

– শুনেছি খোকন বিশ্বাসের এনজিও বেশ সম্প্রসারিত, আসাদুল বিশ্বাস শুধু সফল ব্যববসায়ীই নন, তিনি জনপ্রতিনিধিও। বিশ্বাস পরিবার বলতে তুমি কি এদের বলছো? তা ছাড়া ইতালিতে নতুন ঠিকানা মানে নিশ্চয় দেশ ছেড়ে যাওয়া নয়?

কি জানি বাবা, এতোদিন শুনেছি ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে অনেকেই প্রবাসে পাড়ি জমান। এখন শুনছি অনেক টাকা হলেও প্রবাস পছন্দ।

-কেন? তোমাকে না একদিন বলেছিলাম, চলো নিশিতে সূর্যাস্তের দেশ নরওয়েতে ঘর বাধি। মনে নেই। সত্যিই যদি পুনর্জন্ম থাকে, আর সেই জন্মে যদি তোমার আমার অনেক টাকা হয়, তখন না হয় ঘুরে দেখবো। দেশ ছেড়ে পরবাস? কশ্চিনকালেও নয়।

– তোমার গণ্ডিবদ্ধ স্বপ্ন আমার একদম অপছন্দ। পৃথিবীটাকে একটু আপন করে ভাবতে শেখো। কীভাবে শিখবো বলো? রাজনীতিটাও করতে দিলে না। অভাব ঘোচাবো? না বড় স্বপ্ন দেখে ঘোরে ঘোরেই ছেঁড়া কাঁথার বিছানায় পড়ে থাকবো?

– যারা রাজনীতিতে ঢুকে বড় বড় দায়িত্ব পেয়ে রাতারাতি ধনী হয়েছেন তাদের সংখ্যা কতো? অবশ্যই ওদের চেয়ে সফল উদ্যোক্তার সংখ্যাই বেশি। ঝুঁকি নিতে হয়।

ধ্যাত! অতো উপদেশ শুনতে ভালো লাগছে না। অন্য কথা বলো। কখন শুনলে আমি ফিরছি? তেমন কাউকেই তো বলিনি।

– গানে গানে বলতে হয় পটলা! আকাশে কান পেতে থাকি, এই বুঝি ডাকছো তুমি….। তোমার জন্যই পুরোনো নম্বরটা চালু রেখেছি। যখনই দেখেছি তোমার ফোন, তখনই আমি নিশ্চিত- তুমি ফিরছো। এই নতুন নম্বরটা সেভ করো। দূরে বসে বহুবার ভেবেছি তোমাকে রিং দেবো। অজানা ভয় আমাদের আড়াল করে রেখেছে। আর তোমার মিষ্টি হাসির জবাব দিতে না পারার কষ্ট আমাকে কুরে কুরে খেয়েছে।

– বহুদিন পর ফিরছো। বিরহে রেখো না। প্রতিদিন না হলেও সপ্তায় অন্তত দু দিন প্রাণ খুলে কথা বলো। তোমাকে উজাড় করে দিতে চাই। নেবে না? নানা, পুরোটা দিয়ো না। সুনীল যেমন নীরাকে নেয়নি, আমিও তোমাকে ওভাবে উপড়ে নিতে চাই না। তোমাকে উপড়ে নিলে কী থাকে আমার?

– আরে বোকা, আমি তো আমাকে দিচ্ছি না। আমার কাছে থাকা গরম গরম খবরগুলো তোমাকে দিতে চাই। ও হো! তাই বলো। শীতে গরম খবর? ওর চেয়ে ঢের ভালো শরীরের উষ্ণতা, ওর উত্তাপে আবেগী করো, পুড়িও না প্রিয়তমা।

– ভালোয় ভালোয় ফেরো। এখন রাখছি। কথা হবে পরশু।

 

 

 

Leave a comment