ক্যাম্পাসে বাস চাপায় ইবি শিক্ষার্থী নিহত : ২০ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ : বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা

কুষ্টিয়া-যশোর মহাসড়ক অবরোধ : রণক্ষেত্র : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি : আহত ২০ :

 

 

ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভাড়া করা একটি বাসের চাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের তৃতীয়বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান টিটুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। গতকাল রোববার বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নিকট থেকে একটু দূরে ডায়না চত্বরের অদূরে এ ঘটনা ঘটে। তৌহিদ ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার খালিশপুর গ্রামে আব্দুল আজিজের ছেলে। চার বোন এবং দু ভাইয়ের মধ্যে তৌহিদ ছিলেন তৃতীয়। আর দু ভাইয়ের মধ্যে তৌহিদ ছিলো বড়।

Towhid

এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রায় অর্ধশত গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। আগুন দিয়েছে কমপক্ষে ২০টি গাড়িতে। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০টি জায়গায় আগুন লাগিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ালশেল ও ফাঁকা গুলি করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষাথীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। ছাত্র ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। দফায় দফায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালালেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথমে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। এদিকে এ ঘটনায় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি বৈঠকে বসে ক্যাম্পাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ২১ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার বেলা ১২টার দিকে তৌহিদুর রহমান টিটু ক্যাম্পাস থেকে ঝিনাইদহ যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা গাড়ি রাজ মোটরসের একটি বাসের (ঝিনাইদহ-ব-১১-০০১) সামনের গেট দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে বাস থেকে পড়ে যায়। এ সময় রাজ মোটরসের একটি বাস পেছন দিক দিয়ে যাওয়া সাগর পরিবহন (কুষ্টিয়া-জ-১১-০০৪২) তাকে পিষ্ট করে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তৌহিদের সহপাঠী আমির হামজা ও সোহেল জানান, রোববার ৩০৬ নং কোর্সের টিউটোরিয়াল পরীক্ষা ছিলো। তৌহিদসহ আমরা পরীক্ষা দেয়ার পর ১২টার গাড়ি ধরার জন্য ডায়না চত্বরে এসে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করি। এ সময় তৌহিদ রাজ মোটরস থেকে পড়ে গেলে সাগর পরিবহন তাকে পিষ্ট করে চলে যায়। আরেক সহপাঠী নয়ন জানান, তৌহিদকে যে গাড়ি পিষ্ট করে ওই গাড়িটি রাজ মোটরসকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিলো।

এদিকে মৃত্যুর সংবাদ ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বিভাগীয় শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রাখা প্রায় ১০টি গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। আগুন দেয় কমপক্ষে ২০টি গাড়িতে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এছাড়া তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি জায়গায় আগুন লগিয়ে দেয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গাড়ির চালকের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এসে বিক্ষাভ করতে থাকে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্র্র্থীরা প্রশাসন ভবনে ঢুকার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তত অর্ধশত রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ চলাকালে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ বিশববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা প্রশাসন ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রশাসন ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থানরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসন ভবনের উভয় কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত উপাচার্যের বাসভবনেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পুলিশের বেধড়ক পিটুনি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীরা হলেন-সজল, আকাশ, মিথুন, নাঈম, তৌহিদ, শরিফ, জহির, মেহেদী, সজল। আহতদের মধ্যে সজলের পা ভেঙে গিয়েছে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বাকিদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে নিহত ছাত্রের লাশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে রাখা হয়। আধা ঘন্টা সেখানে রাখার পর ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ এবং কলা অনুষদের মাঝখানে রাখা হয়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে লাশ নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ভাড়াকরা ১৫টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ৭-৮টি গাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে। ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কয়েক কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. ত.ম লোকমান হাকিম সমকালকে বলেন, ছাত্ররা বিক্ষিপ্তভাবে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। একই সময়ে আমরা সব জায়গায় পৌছাতে পারিনি। আমরা আমাদের সাধ্যমতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। যে কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিবুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভাংচুর চালিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এখন পরিস্তিতি শান্ত আছে। তবে কোনো ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করা হয়নি বলে তিনি জানান।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, একজন মেধাবী ছাত্রের এরকম মৃত্যু আসলেই দুঃখজনক। এ ঘটনায় আমি অত্যন্ত ব্যধিত হয়েছি। আমি নিহত শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাই। ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, দোষীকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা: এদিকে বাস চাপায় নিহত ছাত্রের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক জরুরি বৈঠক ডেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তি নির্দেশ দেওয়া না পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ থাকবে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সকল আবাসিক ছাত্র ও মঙ্গলবার সকাল ১০টার সকল আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন,উদ্ভত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও অনাকাঙ্ক্ষি এড়াতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।

হল খোলা রাখার দাবিতে ছাত্রীদের বিক্ষোভ: এদিকে হল ত্যাগ করার নির্দেশের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রীরা। হল খোলার রাখার দাবিতে রোববার বিকেল চারটার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হল থেকে মৌন মিছিল বের করে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। প্রশাসন ভবনের সামনে তারা ঘণ্টাখানেক অবস্থান করে। এ সময় ছাত্রীরা হল খোলা রেখে ঘটনার তদন্ত অব্যাহত রাখার দাবি জানান। একই সাথে তারা আসন্ন শীতকালীন ছুটি বাতিলের দাবি জানান। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৫টা) ছাত্রীরা প্রশাসন ভবনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকারের সাথে বৈঠক করছিলেন।

তদন্ত কমিটি গঠন: নিহত ছাত্রের মৃত্যুর কারণ ও ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে

ক্যাম্পাসে বাস চাপায় ইবি শিক্ষার্থী নিহত : ২০ গাড়িতে অগ্নিসংযোগ : বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের বন্ধ ঘোষণা

কুষ্টিয়া-যশোর মহাসড়ক অবরোধ : রণক্ষেত্র : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি : আহত ২০ :

ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ভাড়া করা একটি বাসের চাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের তৃতীয়বর্ষের ছাত্র তৌহিদুর রহমান টিটুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। গতকাল রোববার বেলা ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের নিকট থেকে একটু দূরে ডায়না চত্বরের অদূরে এ ঘটনা ঘটে। তৌহিদ ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার খালিশপুর গ্রামে আব্দুল আজিজের ছেলে। চার বোন এবং দু ভাইয়ের মধ্যে তৌহিদ ছিলেন তৃতীয়। আর দু ভাইয়ের মধ্যে তৌহিদ ছিলো বড়।

এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের প্রায় অর্ধশত গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। আগুন দিয়েছে কমপক্ষে ২০টি গাড়িতে। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০টি জায়গায় আগুন লাগিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ালশেল ও ফাঁকা গুলি করলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষাথীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বেধে যায়। ছাত্র ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। দফায় দফায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভাঙচুর চালালেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথমে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। এদিকে এ ঘটনায় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি বৈঠকে বসে ক্যাম্পাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ২১ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার বেলা ১২টার দিকে তৌহিদুর রহমান টিটু ক্যাম্পাস থেকে ঝিনাইদহ যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাড়া করা গাড়ি রাজ মোটরসের একটি বাসের (ঝিনাইদহ-ব-১১-০০১) সামনের গেট দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে বাস থেকে পড়ে যায়। এ সময় রাজ মোটরসের একটি বাস পেছন দিক দিয়ে যাওয়া সাগর পরিবহন (কুষ্টিয়া-জ-১১-০০৪২) তাকে পিষ্ট করে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। তৌহিদের সহপাঠী আমির হামজা ও সোহেল জানান, রোববার ৩০৬ নং কোর্সের টিউটোরিয়াল পরীক্ষা ছিলো। তৌহিদসহ আমরা পরীক্ষা দেয়ার পর ১২টার গাড়ি ধরার জন্য ডায়না চত্বরে এসে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করি। এ সময় তৌহিদ রাজ মোটরস থেকে পড়ে গেলে সাগর পরিবহন তাকে পিষ্ট করে চলে যায়। আরেক সহপাঠী নয়ন জানান, তৌহিদকে যে গাড়ি পিষ্ট করে ওই গাড়িটি রাজ মোটরসকে ওভারটেক করার চেষ্টা করছিলো।

এদিকে মৃত্যুর সংবাদ ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বিভাগীয় শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে রাখা প্রায় ১০টি গাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। আগুন দেয় কমপক্ষে ২০টি গাড়িতে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এছাড়া তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বেশ কয়েকটি জায়গায় আগুন লগিয়ে দেয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গাড়ির চালকের শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এসে বিক্ষাভ করতে থাকে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্র্র্থীরা প্রশাসন ভবনে ঢুকার চেষ্টা করলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। এ নিয়ে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অন্তত অর্ধশত রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষ চলাকালে উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ বিশববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা প্রশাসন ভবনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রশাসন ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থানরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসন ভবনের উভয় কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত উপাচার্যের বাসভবনেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। পুলিশের বেধড়ক পিটুনি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীরা হলেন-সজল, আকাশ, মিথুন, নাঈম, তৌহিদ, শরিফ, জহির, মেহেদী, সজল। আহতদের মধ্যে সজলের পা ভেঙে গিয়েছে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বাকিদের বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে নিহত ছাত্রের লাশ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে রাখা হয়। আধা ঘন্টা সেখানে রাখার পর ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ এবং কলা অনুষদের মাঝখানে রাখা হয়। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে লাশ নিহতের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা ভাড়াকরা ১৫টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ৭-৮টি গাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে। ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কয়েক কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. ত.ম লোকমান হাকিম সমকালকে বলেন, ছাত্ররা বিক্ষিপ্তভাবে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। একই সময়ে আমরা সব জায়গায় পৌছাতে পারিনি। আমরা আমাদের সাধ্যমতো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। যে কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিবুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভাংচুর চালিয়েছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এখন পরিস্তিতি শান্ত আছে। তবে কোনো ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করা হয়নি বলে তিনি জানান।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন, একজন মেধাবী ছাত্রের এরকম মৃত্যু আসলেই দুঃখজনক। এ ঘটনায় আমি অত্যন্ত ব্যধিত হয়েছি। আমি নিহত শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাই। ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তিনি বলেন, দোষীকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা: এদিকে বাস চাপায় নিহত ছাত্রের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এক জরুরি বৈঠক ডেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তি নির্দেশ দেওয়া না পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ থাকবে। সোমবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সকল আবাসিক ছাত্র ও মঙ্গলবার সকাল ১০টার সকল আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার বলেন,উদ্ভত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও অনাকাঙ্ক্ষি এড়াতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।

হল খোলা রাখার দাবিতে ছাত্রীদের বিক্ষোভ: এদিকে হল ত্যাগ করার নির্দেশের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রীরা। হল খোলার রাখার দাবিতে রোববার বিকেল চারটার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হল থেকে মৌন মিছিল বের করে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। প্রশাসন ভবনের সামনে তারা ঘণ্টাখানেক অবস্থান করে। এ সময় ছাত্রীরা হল খোলা রেখে ঘটনার তদন্ত অব্যাহত রাখার দাবি জানান। একই সাথে তারা আসন্ন শীতকালীন ছুটি বাতিলের দাবি জানান। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৫টা) ছাত্রীরা প্রশাসন ভবনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকারের সাথে বৈঠক করছিলেন।

তদন্ত কমিটি গঠন: নিহত ছাত্রের মৃত্যুর কারণ ও ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের নিমিত্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত, সড়ক দুর্ঘটনায় কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট আজ সোমবার বিকেল ৪টা পর্যস্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাসমালিক সমিতি। কুষ্টিয়া থেকে সব রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র রোববার দুপুরে বাস দুঘটনায় নিহত হয়। এ ঘটনার জের ধরে কুষ্টিয়ায় ৩০টি বাস-ট্রাক আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। এতে যানবাহনগুলো আগুনে পুড়ে যায়। এ ঘটনার পর কুষ্টিয়া জেলা বাস মালিক সমিতি ও পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠন অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট আহ্বান করে। কুষ্টিয়া বাস মালিক সমিতি, মটর শ্রমিক ইউনিয়ন, ট্রাক মালিক সমিতি, ট্রাক-ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকসহ ৫টি সংগঠন গতকাল রোববার দুপুরে এ ধর্মঘট আহবান করে। কুষ্টিয়া বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আবুল ফজল সেলিম জানান, ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের বিচার দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয়।

বিভিন্ন সংগঠনের শোক: এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোক ও শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি পৃথক পৃথক ভাবে সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, শাপলা ফোরাম, জিয়া পরিষদ, গ্রিন ফোরাম, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্রশিবির।

র নিমিত্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পরিবহন ধর্মঘট স্থগিত, সড়ক দুর্ঘটনায় কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট আজ সোমবার বিকেল ৪টা পর্যস্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাসমালিক সমিতি। কুষ্টিয়া থেকে সব রুটে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র রোববার দুপুরে বাস দুঘটনায় নিহত হয়। এ ঘটনার জের ধরে কুষ্টিয়ায় ৩০টি বাস-ট্রাক আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। এতে যানবাহনগুলো আগুনে পুড়ে যায়। এ ঘটনার পর কুষ্টিয়া জেলা বাস মালিক সমিতি ও পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠন অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট আহ্বান করে। কুষ্টিয়া বাস মালিক সমিতি, মটর শ্রমিক ইউনিয়ন, ট্রাক মালিক সমিতি, ট্রাক-ট্যাঙ্কলরি শ্রমিকসহ ৫টি সংগঠন গতকাল রোববার দুপুরে এ ধর্মঘট আহবান করে। কুষ্টিয়া বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসান আবুল ফজল সেলিম জানান, ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের বিচার দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেয়।

বিভিন্ন সংগঠনের শোক: এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোক ও শোক-সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি পৃথক পৃথক ভাবে সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, শাপলা ফোরাম, জিয়া পরিষদ, গ্রিন ফোরাম, ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্রশিবির।

Leave a comment