সার্ক ঘোষণায় আশার আলো

যে উদ্দেশ্য সামনে রেখে ৩০ বছর আগে সার্কের যাত্রা শুরু হয়েছিলো, তা এক রকম অপূর্ণই রয়ে গেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কার্যকর একটি সংস্থা হিসেবে বলতে গেলে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি আঞ্চলিক সহযোগিতার এ সংস্থাটি। নিয়মিত শীর্ষ সম্মেলনের মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকতা বজায় রাখা হয়েছে বলা চলে। তবে এবার সম্মেলনে সার্ক নেতাদের মধ্যে বোধোদয় ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সার্ককে শক্তিশালী ও সময়োপযোগী করার বিকল্প যে নেই, তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন তারা। আর সে কারণেই অর্থনৈতিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাসহ সার্ক সচিবালয় সংস্কার ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিন দশকের ব্যর্থতাও স্বীকার করে নিয়েছেন সার্ক নেতারা।

‘শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য নিবিড় সংহতি’ এবারের কাঠমাণ্ডু ঘোষণার এটাই শিরোনাম। ৩৬ দফার এ ঘোষণায় আঞ্চলিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ, অর্থায়ন, নিরাপত্তা অবকাঠামো, যোগাযোগ বা কানেক্টিভিটিসহ সংস্কৃতি খাতেও সহযোগিতা জোরদার করার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি-সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। নিজেদের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের যে বিকল্প নেই, নতুন করে সে উপলব্ধি হয়েছে। এবারের সার্ক সম্মেলনের আগে তিনটি চুক্তির কথা শোনা গিয়েছিলো। কিন্তু নানা রকম টানাপোড়েনে ঝুলে যায় চুক্তিগুলো। শেষ পর্যন্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে মুখ রক্ষা হয়েছে। কাঠমাণ্ডু ঘোষণায় সার্কের ব্যর্থতার বিষয়গুলোই যেন সমালোচিত হয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার সদস্য দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক বিনিময় যদি না থাকে, তাহলে সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা যায় না। আর এজন্য প্রয়োজন সম্পর্কোন্নয়ন। এ লক্ষ্যেই জোর দেয়া হয়েছে নানামুখি ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের দিকে। পরিকল্পিত উপায়ে ও পর্যায়ক্রমে মুক্তবাণিজ্য এলাকা, কাস্টমস ইউনিয়ন, অভিন্ন বাজার এবং একটি অভিন্ন অর্থনৈতিক ও আর্থিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক ইউনিয়ন অর্জনের কথা উঠে এসেছে এবারের ঘোষণায়। কানেক্টিভিটি নিশ্চিত করতে দক্ষিণ এশিয়ায় যোগাযোগ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সার্ক মোটরযান চলাচল চুক্তি ও সার্ক আঞ্চলিক রেল চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পণ্য, সেবা, পুঁজি, প্রযুক্তি ও লোকজনের আন্তসীমান্ত চলাচল সুগম করার বিষয়টি নিশ্চিত করার বিষয়টিও এবার গুরুত্ব পেয়েছে। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেটানোর লক্ষ্যে জলবিদ্যুৎ, প্রাকৃতিক গ্যাস, সৌরশক্তি, বায়ুসহ বিভিন্ন শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন লাইন স্থাপন ও বিদ্যুৎ কেনাবেচার জন্য আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক প্রকল্প চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। এবারের সার্ক সম্মেলনের ভেতর দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্কের শীতলতা কিছুটা হলেও ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। আমরা আশা করব, সম্পর্কের উষ্ণতা কাজে লাগিয়ে সার্ককে কার্যকর একটি আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।

Leave a comment